কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। —ফাইল চিত্র।
কুয়াশার ফলে বিমান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ইতিমধ্যেই যাত্রীদের ক্ষোভের চিত্র দেখেছে দেশ। এ বার সেই উত্তাপ ছড়াল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও।
কুয়াশার জেরে বিমান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘দিল্লি বিমানবন্দরে সম্প্রতি অরাজকতা দেখা গিয়েছে। আটকে পড়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। মকর সংক্রান্তিতে বাড়ি ফিরতে চাওয়া পেশাদার, লোহরি উৎসবে গ্রামে ফিরতে চাওয়া সেনা অফিসার, অসুস্থ বাবা বা মার জন্য বাড়ি ফিরতে চাওয়া সন্তান, সকলেরই সময়সূচিতে দেখা দিল বিভ্রাট। শীতের দিনে এমন কুয়াশা হয়েই থাকে।’’ শশীর দাবি, এটা মোদী সরকারের তৈরি বিপর্যয়। বিমান মন্ত্রকের অবহেলা ও দক্ষতার অভাবের ফল।
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন তারুর। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্যাট-৩বি ব্যবহারের উপযোগী রানওয়ে তৈরি করা হয়। ক্যাট-৩বি ব্যবস্থা ব্যবহার করে কুয়াশা বা কম দৃশ্যমানতার ক্ষেত্রেও অবতরণ করতে পারেন বিমানচালক।
তাঁর বক্তব্য, ‘‘অন্য মেরামতি কাজে ব্যবহৃত একটি ক্রেন একটি রানওয়েতে থাকায় ক্যাট-৩বি ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছিল। দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানালেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ তারুরের বক্তব্য, ‘‘বিমান মন্ত্রক জানিয়েছে ৫০ মিটারেরও কম দৃশ্যমানতা ছিল। ফলে ক্যাট-৩বি কার্যকর করা সম্ভব হত না। কিন্তু আরও উন্নত মানের ক্যাট-৩সি ব্যবস্থা রয়েছে যাতে দৃশ্যমানতা একেবারে না থাকলেও বিমান চলাচল করতে পারে। কিন্তু ২০০৮ সালের পরে ১৬ বছরেও একটি ক্যাট-৩সি ব্যবহারের উপযোগী রানওয়ে তৈরি হয়নি। তার মধ্যে ১০ বছর ছিল বর্তমান সরকার।’’
এরই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অনেক দেশে থাকলেও ভারতের রাজধানীতে কেন ক্যাট-৩সি ব্যবহারের উপযোগী রানওয়ে নেই? যেখানে বারবারই শীতে দিল্লিতে ভয়ঙ্কর কুয়াশা ও ধোঁয়াশার সমস্যা দেখা যায়।’’ আটকে পড়া যাত্রীদের জন্যও বিমান মন্ত্রক উপযু্ক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে দাবি তারুরের।
এর পরেই তারুরকে নিশানা করেছেন বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তারুরকে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিশেষজ্ঞদের ব্যবহৃত কিছু শব্দ নিয়ে এক ব্যক্তি ব্যস্ত আছেন। তাঁর মতে, সংবাদমাধ্যমের বাছা বাছা প্রতিবেদন থেকে তথ্য বেছে নেওয়াই হল গবেষণা।’’
পাশাপাশি, তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আরামচেয়ারে বসা ওই সমালোচক ও কংগ্রেসের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের বিমান চলাচল ক্ষেত্রের প্রাযুক্তিক দিক সম্পর্কে অজ্ঞতা দূর করতে কিছু তথ্য জানানো প্রয়োজন।’’
সিন্ধিয়ার বক্তব্য, রানওয়ের মেরামতি যাত্রী সুরক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। চলতি বছরে ১৫ ডিসেম্বরের আগেই মেরামতির কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু দূষণ সংক্রান্ত ঘটনা ও অন্য কারণের ফলে সে কাজে দেরি হয়। চলতি সপ্তাহে মেরামতি হওয়া রানওয়ে ফের চালু হবে।
সিন্ধিয়ার দাবি, যে ক্রেনটির কথা তারুর বলেছেন সেটি দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে রানওয়েতে প্রভাবের কথা ভেবে ক্রেনটি কুয়াশা থাকবে না এমন দিনে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিমানমন্ত্রীর মতে, যাত্রীদের সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবহার না করায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে শো-কজ় নোটিস পাঠিয়েছে মন্ত্রক। এ ক্ষেত্রে কেমন ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে বিধি চালু করা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির উপরে। প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
এরই সঙ্গে সিন্ধিয়ার আরও দাবি, ভারতে যে সব বিমান চলাচল করে তাদের মধ্যে অধিকাংশই একেবারে দৃশ্যমানতা না থাকলে চলাচল করতে পারে না।