আহমেদকে জেতাতে রিসর্টবন্দি বিধায়করা

কংগ্রেস নেতারা এত দিন রাতবিরেতে ফোন পেতেন আহমেদ পটেলের। সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব ফোনেই ‘ম্যাডাম’-এর নির্দেশ জানিয়ে দিতেন। দলীয় কোঁদলে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতেও ছুটতে হতো ‘আহমেদভাই’-এর কাছেই। সেই আহমেদভাই-ই এখন গুজরাতের কংগ্রেস নেতাদের ফোনে অনুরোধ করছেন রাজ্যসভা নির্বাচনে তাঁরা যেন তাঁকেই ভোট দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

সাবধানী: বিজেপির টোপ এড়াতে দলের নির্দেশে বেঙ্গালুরুর পথে গুজরাতের কংগ্রেস বিধায়করা। শনিবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই।

হঠাৎ করেই যেন খেলাটা ঘুরে গিয়েছে!

Advertisement

কংগ্রেস নেতারা এত দিন রাতবিরেতে ফোন পেতেন আহমেদ পটেলের। সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব ফোনেই ‘ম্যাডাম’-এর নির্দেশ জানিয়ে দিতেন। দলীয় কোঁদলে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতেও ছুটতে হতো ‘আহমেদভাই’-এর কাছেই। সেই আহমেদভাই-ই এখন গুজরাতের কংগ্রেস নেতাদের ফোনে অনুরোধ করছেন রাজ্যসভা নির্বাচনে তাঁরা যেন তাঁকেই ভোট দেন।

আরও পড়ুন: অমিত-চালে বসপা, সপার ঘরেও ভাঙন

Advertisement

তবে শুধুই আহমেদ পটেলের ফোনের ভরসাতেই থাকতে পারছে না দল। গুজরাতের ৪০ জন কংগ্রেস বিধায়ককে রাজ্য থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাশের রাজ্য কর্নাটকে। যাতে বিজেপি তাঁদের ৫-১০ কোটি টাকা দিয়ে ভাঙিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। বেঙ্গালুরুর কাছে এক বিলাসবহুল রিসর্টে রাখা হয়েছে তাঁদের। রিসর্টটি কংগ্রেসেরই মন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের। সেখানে রয়েছে আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা। কর্নাটক কংগ্রেস-শাসিত রাজ্য। তাই সেখানকার পুলিশ-প্রশাসনের উপরেও ভরসা রাখছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। রিসর্টের বাইরে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা হয়েছে।

কংগ্রেসের ৬ জন বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন ইতিমধ্যেই। আরও কয়েক জন বিধায়ক পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। যত বিধায়কের সংখ্যা কমছে, আহমেদ পটেলের হেরে যাওয়ার আশঙ্কা ততই বাড়ছে। এই অবস্থায় গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মার নেতৃত্বে কংগ্রেস আজ নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ জানায়, বিজেপি কোটি কোটি টাকা দিয়ে তাদের বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। নির্বাচন কমিশন গুজরাতের মুখ্যসচিবকে এ বিষয়ে তদন্ত করে সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে। তবে দলীয় সূত্রের খবর, এ দিনও ৩ জন বিধায়ককে বিজেপি কোটি কোটি টাকার লোভ দেখিয়েছে। আজাদের অভিযোগ, অর্থের পাশাপাশি গুজরাতের বিজেপি সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের অফিসারদের দিয়ে বিধায়কদের ও তাঁদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের পাশাপাশি গুজরাতের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

কংগ্রেস তাঁদের দিকে আঙুল তুললেও বিজেপি নেতারা সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। গুজরাত বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি নেতা রামলাল ভোরা জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, তাঁরা কোনও চাপের মুখে এ কাজ করেননি। তিনি নিজে পদত্যাগপত্র গ্রহণের সময় কংগ্রেস নেতাদের থেকে এই বিষয়টি জেনে নিয়েছেন।

আগামী ৮ অগস্ট রাজ্যসভায় ভোটাভুটি। তার আগে পর্যন্ত কংগ্রেস নেতাদের ‘নিরাপদ’ কর্নাটকেই রাখা হবে। কিন্তু তাতে কি ‘ক্রসভোট’ রোখা যাবে? সদ্য কংগ্রেস ছাড়ে আসা শঙ্করসিন বাঘেলার ঘনিষ্ঠ বিধায়ক রাঘবজি পটেলের দাবি, ‘‘আরও ২০ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন। এ জন্য কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দুই-ই দায়ী। আহমেদভাই কোনও ভাবেই রাজ্যসভায় যেতে পারবেন না।’’

কংগ্রেস নেতারা জানাচ্ছেন, বিজেপি যাতে অর্থের টোপ না দিতে পারে, সে জন্য কর্নাটকে রিসর্টবাসী দলের বিধায়কদের মোবাইল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। তাঁর কথায়, ‘‘বন্যায় গোটা রাজ্য জলমগ্ন। সরকার ত্রাণ-পুনর্বাসনে ব্যস্ত। এ সময়ে কংগ্রেসের বিধায়কেরা মোবাইল বন্ধ করে ভিন্ রাজ্যের রিসর্টে আমোদপ্রমোদে ব্যস্ত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement