মেট্রো সফরে খুদে সহযাত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী। ছবি: টুইটার।
বহু বিদেশি সংস্কৃতির মতোই এদেশেও জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো হয় ইংরেজি ভাষায় হ্যাপি বার্থ ডে গানটি গেয়ে। কিন্তু রবিবার ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন। তাঁর জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা গান গাওয়া হল সংস্কৃত ভাষায়। ‘‘জন্ম দিনম ইধম আয়ি প্রিয় সখে। শান্তনতু তে সর্বদা মুড়ম।। প্রার্থয়ামাহে ভব শতায়ুষি। ঈশ্বরস-সদাত্বাম চা রক্ষতু।। পুণ্য কর্মনা কৃতিমার্যয়া। জীবনম তব ভবতু সার্থকম।। (অর্থাৎ প্রিয় সখা তোমাকে শুভ জন্মদিন। এই জন্মদিন তোমার জীবনে আরও আনন্দ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক। ঈশ্বরের কাছে তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি। ঈশ্বর তোমায় সর্বদা রক্ষা করুন। ভাল কাজের মধ্য দিয়ে তোমার জীবন সার্থক হোক।)’’
রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ছিল প্রধানমন্ত্রীর ৭৩তম জন্মদিন। তার জন্মদিনের উদ্যাপনের পরতে পরতে এ বার ছিল দেশীয় সংস্কৃতির ঝলক। নিজের বিশেষ নিরাপত্তার গাড়ি ছেড়ে মোদী সফর করেন দিল্লি মেট্রোয়। এর পাশাপাশি নিজের জন্মদিন ‘প্রিয় দেশবাসী’কে একটি অনুরোধও করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, ‘‘সামনে উৎসবের মরসুম— গণেশ চতুর্থী, দীপাবলি, ধনতেরস আসছে। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, এই মরসুমে আপনারা যখন কেনাকাটা করবেন, তখন বিদেশি জিনিস কিনবেন না। বদলে স্বদেশী দ্রব্য কিনুন। দেশের সংস্কৃতি এবং কারিগরিকে উৎসাহ দিন।’’ বস্তুত স্বদেশী কারিগরদের উৎসাহ দিতে রবিবার নিজের জন্মদিনে ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ নামে একটি প্রকল্পেরও ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের কারিগরদের স্বার্থ মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন গত কয়েক বছর ধরেই কোন না কোনও চমক থেকেছে। গত বছর নামিবিয়া থেকে দেশের কুনো জাতীয় অভয়ারণ্যে চিতাবাঘ আনিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী । ২০২১ সাল ছিল কোভিডের বছর। সে বছর মোদীর জন্মদিনে ২.২৬ কোটি করোনা টিকা প্রদানের কাজ সম্পন্ন করেছিল কেন্দ্র। এ ভাবেই কখনও জন্মদিনে কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন তো কখনও তাঁর সম্মানে সাত দিনের সেবা শপথ নিয়েছে তাঁর দল। রবিবারের চমক ছিল স্বদেশীকে সমর্থন। মোদীর কথায়, ভোকালস ফর লোকালস।
রবিবার মোদীর জন্মদিনের সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছিল উদ্যাপন অনুষ্ঠান। মোদী নিজে দিল্লিতে থাকলেও তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাতে তাঁর কাটআউটের মুখে মিষ্টি দিয়ে জন্মদিন পালন করা হয়। দিল্লির বাসভবনের বাইরেও উপচে পড়ে শুভেচ্ছা বার্তা। দুপুরে ছিল মোদীর বিশেষ কর্মসূচি। নিজের জন্মদিনে দিল্লিতে যশোভূমি কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন মোদী। তবে তার আগে দিল্লি মেট্রোর একটি নতুন বর্ধিত অংশের উদ্বোধন করতে দ্বারকা স্টেশনে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে মেট্রোয় সফর করেন দু’কিলোমিটার পথ।
দ্বারকা সেক্টর ২১ থেকে যশোভূমি দ্বারকা সেক্টর ২৫ পর্যন্ত দু’কিলোমিটার নতুন মেট্রোপথ বাড়ছে দিল্লি মেট্রোর এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেস রুটে। সেই নতুন পথেরই উদ্বোধন করেন মোদী। ওই পথটুকু মেট্রোয় সফরও করেন।
জন্মদিনে মোদী পরেছিলেন তাঁর চেনা পোশাক। ফুলহাতা মোদী কুর্তা, তার উপর জ্যাকেট এবং চুড়িদার। ফিকে আকাশ নীল কুর্তার উপর গাঢ় নীল জ্যাকেট পরেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল সাদা রঙের চুড়িদার পাজামা।
মেট্রোর কামরায় সাধারণ যাত্রীদের আসনেই বসেছিলেন মোদী। তাঁর পাশের আসনটিতে যাত্রীদের অনেকেই এসে বসছিলেন। কুশল জিজ্ঞাসা করছিলেন। শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন মোদীকে। প্রধানমন্ত্রীকে সংস্কৃত ভাষায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা গানও গেয়ে শোনান তাঁরাই। দু’কিলোমিটারের সফরে ছোটদের সঙ্গে গল্প করতে দেখা যায় মোদীকে। এমনকি, অনেকের নিজস্বী তোলার আবদারও মেটান তিনি।
মোদীর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর। সাধারণত এই দিনই বিশ্বকর্মা পুজো হয়। যদিও বাংলা ক্যালেন্ডারে এ বছর বিশ্বকর্মা পুজো পড়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ সোমবার। মোদী অবশ্য যশোভূমিতে বললেন রবিবারই ‘বিশ্বকর্মা জয়ন্তী’। এমনকি, কনভেনশন সেন্টারের বিরাট বিশ্বকর্মার মূর্তিতে ফুল দিয়ে পুজোও করেন তিনি। আর বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষেই মোদী বলেন, তাঁর নতুন পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পটি হবে দেশের বিশ্বকর্মাদের জন্য। ১৮টি ক্ষেত্রের কারিগরদের জন্য ওই প্রকল্প ঘোষণা করে মোদী ১৮টি ক্ষেত্রের ডাক টিকিটও প্রকাশ করেন।