প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
উত্তরাখণ্ডে আপাতত কোনও ভোট নেই। কিন্তু সেখানে রয়েছে বহু প্রাচীন মন্দির। রয়েছে পাহাড়ে ঘেরা নির্মল নিসর্গ। ভোটমুখী রাজ্যে বার্তা দেওয়ার জন্য উত্তরাখণ্ড যথেষ্ট উপযুক্ত।
নয়াদল্লির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুটিকেই কাজে লাগিয়েছেন বিচক্ষণ ভাবে, যা আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে দাঁড়ানো রাজ্যগুলির ভোটারদের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি আরও পোক্ত করার বার্তাবহ। একের পর এক মন্দিরে গিয়ে ধ্যান, পুজা, আরতি, শঙ্খধ্বনি, ডুগডুগি বাজিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতির পালে তাতে দিনভর বাতাস লেগেছে। মনে করা হচ্ছে, সেই সঙ্গে মোদী তৈরি করেছেন নিপুণ এক দৃশ্য তৈরির রাজনীতি। কোনও মন্দিরে তিনি পরেছেন সাদা পাগড়ি সাদা আলখাল্লার মতো ঝুলওয়ালা স্থানীয় জনজাতির পোশাক। আবার পরের মন্দিরে তাঁকে দেখা গিয়েছে কালো কুর্তা সাদা চুড়িদারে। ক্যামেরা তাঁকে ধরেছে স্থল এবং অন্তরীক্ষ থেকেও। তিনি হেঁটে গিয়েছেন পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে, ক্যামেরা দেখিয়েছে, যেন এক দীর্ঘ পাহাড়ি পথে তিনি একাকী পথিক।
আজ উত্তরাখণ্ডের গ্রামোন্নয়ন, সড়ক, শক্তি, পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিপর্যয় মোকাবিলার মতো বিভিন্ন বিষয়ে ৪২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন মোদী। সেই সঙ্গে পিথৌরাগড়ে পার্বতী কুণ্ড, আদি কৈলাশ মন্দির, যোগেশ্বর মন্দিরে পুজো ও আরতি করেছেন। পুজো দেওয়ার পর গুঞ্জি গ্রামে স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। মোদী বলেন, “বিশ্বাস এবং জাতীয় প্রতিরক্ষার এই ভূমিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। উত্তরাখণ্ডের উন্নয়ন এবং এখানকার মানুষের বিকাশ আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্যগুলির একটি। এই দশকটি উত্তরাখণ্ডের দশক হতে চলেছে।” তাঁর প্রিয় ‘ডবল এঞ্জিন’ সরকারের সুফলতত্ত্ব এখানেও আমদানি করেছেন মোদী।
পার্বতী কুণ্ডে একাগ্র চিত্তে তাঁর পুজো দেওয়ার দৃশ্য ধরা হয় ড্রোন ক্যামেরায়। পুজো করার পরে তিনি বলেন, “আমি প্রতিটি ভারতবাসীর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করেছি। উন্নত ভারতের প্রতিজ্ঞাকে আরও শক্তিশালী করার জন্যও প্রার্থনা করেছি। উত্তরাখণ্ডের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা যাতে পূরণ হয় সে জন্য আশীর্বাদ চেয়েছি।” পিথোরাগড়ে পার্বতী কুণ্ডের পাশে শিব-পার্বতী মন্দিরেও আরতি করেন প্রধানমন্ত্রী। শঙ্খ, ঘণ্টা এবং ডুগডুগি বাজিয়ে পূজার্চনা করতে দেখা যায় তাঁকে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর এক্স হ্যান্ডেলে পিথোরাগড়ের টলটলে নীল জলের পার্বতী কুণ্ড হ্রদের সামনে অভিনব পোশাকে তুষারপর্বত ঘেরা প্রকৃতির মাঝে প্রণামের মুদ্রায় মোদীর ছবি পোস্ট করা হয়েছে। অন্য একটি ছবিতে ধ্যানমুদ্রায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। সোশাল মিডিয়ার পোস্ট আরও একটি ছবিতে গর্ভগৃহে দেবতার আরতি করতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। মন্দির প্রদক্ষিণ করতেও দেখা গিয়েছে।
হিন্দুত্বের যে রেশ আজ উত্তরাখণ্ড থেকে ছড়িয়ে দিতে শুরু করলেন মোদী, তা নভেম্বরের বিধানসভা ভোটগুলিতে আরও প্রখর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অক্টোবরের শেষে দশেরার দিনে দিল্লিতে রামলীলা উৎসবে চিরাচরিত রাবণ, কুম্ভকর্ণ এবং মেঘনাদের পাশাপাশি আরও একটি নতুন পুত্তলিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাম তাকে বাণে বাণে বিদ্ধ করবেন। সেটি সনাতন ধর্ম-বিরোধীদের পুতুল! দিল্লিতে রামলীলা সংগঠনের সর্বোচ্চ সংগঠন শ্রী রামলীলা মহাসঙ্ঘের সভাপতি অর্জুন কুমারের কথায়, “রামায়ণের চরিত্রদের উচ্চতা রাখা হবে ৮০ থেকে ১০০ ফুট। সনাতন ধর্ম বিরোধীদের পুত্তলিকা আকারে ছোট হবে, ১৫ ফুটের মধ্যে। কিন্তু দেড়শোর বেশি সংখ্যায় তা রাখা হবে।”
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধির সনাতন ধর্ম প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যের পরেই বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার করে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। এতে মেরুকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক লাভ হতে পারে অনুমান করে ওই প্রচারকে ধীরে ধীরে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।