প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
চব্বিশের ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর রাজনৈতিক আক্রমণ বাড়িয়ে চলেছেন। গত কালই রেলের অনুষ্ঠানে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে নিশানা করে ‘কুইট ইন্ডিয়া’র ডাক দিয়েছিলেন। আজ ওই একই ডাক শোনা গেল জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানেও।
বিরোধীরা বেঙ্গালুরু সম্মেলনে জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মঞ্চে ধারাবাহিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী নামটিকে নিশানা করছেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইন্ডিয়া মুজাহিদিন-এর সঙ্গে তুলনা করার পর নতুন তৈরি হওয়া ভারত মণ্ডপম থেকে তিনি ডাক দিয়েছিলেন ‘কুইট ইন্ডিয়া’-র। সেই স্লোগান এখন বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে মোদীকে। আজ এই ভারত মণ্ডপম থেকেই তিনি বলেন, “বলুন কুইট ইন্ডিয়া, কুইট কোরাপশান, কুইট ডায়নেস্টি, কুইট অ্যাপিজ়মেন্ট।” অর্থাৎ দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র আর তোষণের অভিযোগে তিনি বিদ্ধ করতে চাইছেন কংগ্রেস তথা বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে। সূত্রের খবর, লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার শেষে জবাবি বক্তৃতাতেও একই ভাবে রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে পরিবারবাদ এবং দুর্নীতি নিয়ে বিঁধবেন মোদী। লাল কেল্লার বক্তৃতাতেও রাজনৈতিক প্রচার করতে দেখা যাবে তাঁকে।
তার আগে আজ সকালে হরিয়ানা প্রদেশ বিজেপি আয়োজিত দু’দিনের পঞ্চায়েত রাজ অনুষ্ঠানে ভিডিয়ো বক্তৃতায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার চার দশক পরেও কংগ্রেস এখনও বুঝতে পারেনি যে গ্রামে পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থা চালু করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জেলা পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে কংগ্রেসের জমানায় নিজের ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জম্মু ও কাশ্মীর তার একটা উদাহরণ। ২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্তির পর প্রথম গ্রাম এবং জেলা পঞ্চায়েতে ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। যেখানে ৩৩ হাজার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই প্রথম সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তৃণমূল স্তরে।”
আসন্ন স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আজ তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী ‘স্বদেশি আন্দোলনের’ সঙ্গেও নিজেকে সংযুক্ত করেছেন। দাবি করেছেন, “স্বদেশি পণ্য ব্যবহার নিয়ে দেশে নতুন বিপ্লব এসেছে। আমার ইচ্ছা আছে, ১৫ অগস্ট লাল কেল্লায় এই নিয়ে কথা বলার।” তিনি ক্ষমতায় আসার পরে দেশে খাদি শিল্পের কত প্রসার ঘটেছে, তার বিস্তারিত পরিসংখ্যান আজ মোদী দিয়েছেন জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবসের বক্তৃতায়। সেখানেও কংগ্রেসকে বিঁধে তিনি বলেছেন, “স্বাধীনতার পরে দেশে বস্ত্রশিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য কোনও চেষ্টা করা হয়নি, যা করা উচিত ছিল। খাদিকে মরণাপন্ন অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা খাদি পরতেন, তাঁদের হীন নজরে দেখা হত। ২০১৪ সালের পর এই পরিস্থিতি বদলায়। মন কি বাত অনুষ্ঠানের গোড়ার দিকে আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছিলাম কিছু না কিছু খাদির পণ্য কিনতে। এর পর ক্রমশ খাদি উৎপাদন আগের থেকে তিন গুণ বাড়ে।”
মোদী পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন গত ন’বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ কোটি টাকা এসেছে খাদি শিল্প থেকে। তাঁর দাবি, এই সব টাকাটাই গিয়েছে দরিদ্র গ্রামবাসী, জনজাতির কাছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “নীতি আয়োগের হিসাব, ১৩.৫ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমা অতিক্রম করেছে। খাদি এ ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছে। আজ স্বদেশি উৎপাদন জন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।”