প্লাস্টিক বন্ধের ডাক প্রধানমন্ত্রীর

চটশিল্পের আশা, শেষমেশ সরকার সত্যিই বিকল্পের খোঁজে পাটকে গুরুত্ব দিলে, অক্সিজেন পাবে তারা। প্লাস্টিকের থলির বদলে হয়তো কদর এবং বিক্রি বাড়বে চটের ব্যাগের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৭
Share:

মধ্যমণি: আবর্জনা থেকে প্লাস্টিকের জিনিস বাছাই করার কাজে নিযুক্ত কয়েক জন শ্রমিকের সঙ্গে বুধবার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মথুরায়। এএফপি

এক বার ব্যবহারের (সিঙ্গল ইউজ) প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের ডাক ডাক লালকেল্লার প্রাচীর থেকেই দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার মথুরার মাটি থেকে সেই লক্ষ্যকে পুরো দস্তুর সামাজিক আন্দোলনের চেহারা দেওয়ার চেষ্টায় নামলেন তিনি। ২০১৪ সালে মোদী প্রথম বার দিল্লির মসনদে বসার পরে ঠিক এ ভাবেই শুরু হয়েছিল ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প।

Advertisement

তবে বুধবারও মোদী ওই ধরনের প্লাস্টিক পণ্য তৈরি বন্ধের কথা বলেননি। তোলেননি জরিমানার প্রসঙ্গও। কিন্তু আগামী ২ অক্টোবর গাঁধীর দেড়শোতম জন্ম বার্ষিকীতে এক বার ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য মুক্ত দেশ গড়ে তোলার শপথ নিতে সকলকে আহ্বান জানালেন তিনি। তার জন্য বাজারে প্লাস্টিকের ‘ক্যারি ব্যাগ’ না চেয়ে সব সময় বাড়ি থেকে কাপড় বা চটের থলি নিয়ে বেরোনোর কথা যেমন বললেন, তেমনই ডাক দিলেন সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বত্র প্লাস্টিকের জলের বোতল বা গ্লাসের বদলে ধাতব বা মাটির পাত্র ব্যবহারের।

চটশিল্পের আশা, শেষমেশ সরকার সত্যিই বিকল্পের খোঁজে পাটকে গুরুত্ব দিলে, অক্সিজেন পাবে তারা। প্লাস্টিকের থলির বদলে হয়তো কদর এবং বিক্রি বাড়বে চটের ব্যাগের। তবে এক বার ব্যবহারের প্লাস্টিকের বিকল্প অন্তত এই মুহূর্তে তাদের হাতে নেই বলেই ইঙ্গিত। সব মিলিয়েও এক বার ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্যে (যার একটা বড় অংশই জল ও বিভিন্ন পানীয়ের বোতল) রাশ টানতে চাইলে, তার বিকল্প কী হতে পারে, সেই ছবি স্পষ্ট নয় এখনও।

Advertisement

এ দিন মথুরায় মোদী বলেন, ‘‘স্বচ্ছতাই সেবা’ প্রকল্পে পাখির চোখ এখন এক বার ব্যবহারের প্লাস্টিক থেকে দেশের মুক্তি।’’ এর ক্ষতি বোঝাতে পরিবেশ দূষণ থেকে মাছের মৃত্যু— সমস্ত প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন তিনি। গ্রাম, শহর, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ক্লাব থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যক্তি এবং সংগঠনের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘যেখানে যত ‘সিঙ্গল ইউজ’ প্লাস্টিক পণ্য রয়েছে, তা জড়ো করুন। যাতে তা পুনর্ব্যবহারের জন্য না যায়, সেগুলো তুলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নেবে সরকার। কিংবা ব্যবহার হোক রাস্তা তৈরি বা সিমেন্ট কারখানায়।’’

একে সামাজিক আন্দোলনের চেহারা দিতে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কতটা আগ্রহী, তা বোঝাতে এ দিন আমজনতাকে অভ্যাস বদলের ডাক দিয়েছেন মোদী। বলেছেন থলি হাতে বাজারে যাওয়ার কথা। প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার বন্ধ করতে বলেছেন সরকারি দফতর, বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে নিজের যে যার বাড়িতেও। আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক পণ্য বাছাইয়ের কাজ করা যে জনা কয়েক মহিলাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, বক্তৃতার আগে নিজে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে বসেন প্রধানমন্ত্রী। জানতে চান কাজের ধরন। নিজে সেই বাছাইয়ে হাত লাগানোর পাশাপাশি তাঁদের দেখান, কী ভাবে সেই বর্জ্য প্লাস্টিককে ফের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয় মেশিনে।

পরিবেশের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক যে সারা পৃথিবীতেই জ্বলন্ত সমস্যা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু কম খরচে তার বিকল্প কী হবে (বিশেষত সিঙ্গল ইউজের), তা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা এখনও। চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাজারিয়া বলছেন, বিকল্প হিসেবে চটের ব্যাগ গুরুত্ব পেলে, পশ্চিমবঙ্গের পাট শিল্প লাভবান হবে। কিন্তু তা বলে সব ক্ষেত্রে পাট যে ১০০% বিকল্প হতে পারে না, সেটাও মানছেন তিনি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও সতর্ক করেছেন, তিনি নিজে পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন এ ভাবে সারা দেশে প্লাস্টিক পণ্য বন্ধের পথে হাঁটেননি। কারণ তাতে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের রুজি-রুটি খোয়া যাবে। কেন্দ্রীয় খাদ্য, ক্রেতা সুরক্ষা এবং গণবণ্টন মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের কাছে গত কাল এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এই শিল্পের প্রতিনিধিরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement