প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
রেডিয়োয় তাঁর বছরের প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করে দেশের জনজাতি এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়কে বিস্তৃত বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী বছরে লোকসভা ভোট। তার আগে চলতি বছরে একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনগুলিকে সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছে বিজেপি এবং বিরোধী পক্ষ। আর সেই ভোট-যুদ্ধে প্রান্তিক মানুষের ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট রাখার দায়বদ্ধতা বিরোধীদের মতো বিজেপিরও রয়েছে। গত বছরের শেষে গুজরাতের বিধানসভা ভোটে জনজাতিদের জন্য পৃথক প্রচার-কৌশল নিয়েছিলেন মোদী। তাঁদের জন্য নির্ধারিত সরকারি যোজনাগুলিকেও যত্ন করে সামনে নিয়ে এসেছিলেন। যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছে, তাতে বিজেপির আহ্লাদিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, “এ বারের পদ্ম সম্মান প্রাপকদের মধ্যে জনজাতি সম্প্রদায়ের একটা বড় প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। জনজাতিদের জীবন শহরের হই-হট্টগোলের জীবন থেকে অনেকটাই ভিন্ন। সে জীবনের ঝুঁকি ও সমস্যাও অন্য রকম। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সর্বদা উন্মুখ।” মোদীর কথায়, “জনজাতি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং তা নিয়ে গবেষণার প্রচেষ্টা চলছে। টোটো, হো, কুই, কুভি, মান্ডা সম্প্রদায়ের মানুষেরা— যাঁরা জনজাতির বিভিন্ন ভাষার উপরে কাজ করেছেন, তাঁরা পদ্মশ্রী পেয়েছেন। এটা আমাদের সকলের গর্বের বিষয়। ধনীরাম টোটো, জানুম সিং সয়-এর মতো নামগুলির সঙ্গে গোটা দেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছে। যাঁরা জারোয়া, ওঙ্গা, সিড্ডি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যেও কাউকে কাউকে সম্মানিত করা হয়েছে।... আমাদের দেশ এবং সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ জনজাতি সম্প্রদায়। দেশ ও সমাজ গড়ে তোলায় তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।”
বিবিসি-র গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত তথ্যচিত্র নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং শাসক দল। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি মোদীকে। তবে আজ রেডিয়ো-বক্তৃতায় গণতন্ত্রের জয়গান করেছেন তিনি। বলেছেন, “এত বিশাল করে প্রজাতন্ত্র দিবস উদ্যাপন কোনও দেশে হয় না। ভারতে জনগণকেই সবার প্রথমে রাখা হয়।” মোদীর দাবি, এ বারের পদ্ম পুরস্কার দেশের সেই কোনাগুলিতেও পৌঁছে গিয়েছে, যেগুলি অতীতে ‘নকশাল অধ্যুষিত’ ছিল। তিনি বলেন, ‘‘নকশাল অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যুব প্রজন্মকে যাঁরা সঠিক পথ দেখিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়েছেন, তাঁদের পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।’’
গত কাল অবশ্য বিবিসি-র তথ্যচিত্রের প্রসঙ্গ সরাসরি না তুলেই মোদী দাবি করেছিলেন, দেশের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। তা থেকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন তিনি। দিল্লিতে এনসিসি ক্যাডেটদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “দেশকে ভাঙার নানা অজুহাত খোঁজা হচ্ছে। মা ভারতীর সন্তানদের মধ্যে বিভেদ ঘটানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই চেষ্টা সত্ত্বেও ভারতবাসীর মধ্যে কোনও বিভাজন হবে না। ঐক্যের মন্ত্রই ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি।”