চোপড়া নিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
জায়গার নাম না করলেও সংসদে পশ্চিমবঙ্গের চোপড়ার ঘটনার সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে টেনে আনলেন সন্দেশখালির প্রসঙ্গও। নাম করেই। যা থেকে স্পষ্ট যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গে ‘নারী নির্যাতন’-এর ঘটনার সমালোচনাই করতে চেয়েছেন তিনি। তবে তার আগে কিছুটা বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের ভঙ্গীতেই মোদী বলে রাখলেন, কোনও একটি বিশেষ রাজ্যের সমালোচনা বা বিরোধিতা করা তাঁর লক্ষ্য নয়। তাঁর লজ্জা এবং দুঃখ, লোকসভায় ‘কোনও দিগ্গজ’ এ নিয়ে একটিও কথা বললেন না বলে!
গত রবিবারই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় এক যুগলকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় (ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাজিমুল ইসলাম ওরফে ‘জেসিবি’কে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিন-অযোগ্য ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলাও দায়ের করা হয়। আপাতত পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন অভিযুক্ত। সরকারের তরফে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে চোপড়ার আইসি-কে। শাসকদলের তরফে শো কজ় করা হয়েছে এলাকার বিধায়ককে।
যদিও তাতে কেন্দ্রের শাসক এবং বাংলার প্রধান বিরোধীদল বিজেপির মুখ বন্ধ করা যায়নি। দিল্লির সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে চোপড়ার ঘটনা নিয়ে বাংলার সরকারের সমালোচনা করেছেন বিজেপির একাধিক সাংসদ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী-সাংসদ কঙ্গনা রানাউতও। বুধবার প্রধানমন্ত্রীও রাজ্যসভায় ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেন।
রাজ্যসভায় চোপড়ার নাম না করলেও মোদী বলেন, ‘‘সম্প্রতি বাংলার একটি ঘটনা আমি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখেছি। এক মহিলাকে রাস্তায় ফেলে সকলের সামনে পেটানো হচ্ছে। ওই বোন যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। কিন্তু সেই চিৎকার কারও কানে পৌঁছচ্ছে না। কেউ তাঁকে বাঁচাতে আসছেন না। উল্টে সকলেই ভিডিয়ো রেকর্ড করতে ব্যস্ত।’’ সেখানেই না থেমে মোদী টেনে আনেন সন্দেশখালির কথাও। বলেন, ‘‘আর যে ঘটনা সন্দেশখালিতে হয়েছে, তার ছবি দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়!’’
এর পরেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘কাল থেকে কত বড় বড় দিগ্গজের কথা শুনলাম! কারও মুখে এ নিয়ে একটি কথাও শোনা গেল না। এর থেকে বড় লজ্জার আর দুঃখের ঘটনা আর কী হতে পারে?’’ অর্থাৎ, মঙ্গলবার লোকসভার অধিবেশনে মোদী তথা সরকারপক্ষের সঙ্গে নানা বিষয়ে বিরোধীদের বাগ্যু্দ্ধ হয়। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী তার আগের দিন আক্রমণ করেন মোদীকে। বুধবার বলেন, ‘‘যিনি নিজেকে প্রগতিশীল এবং মহিলাদের জন্য আদর্শ নেতা বলেন, তিনিও মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন! কেন? কারণ, ঘটনাটি তাঁদের ‘বন্ধু’ দলের শাসনাধীন রাজ্যে হয়েছে।’’ মোদী কারও নাম না করলেও মনে করা হচ্ছে, তিনি বিরোধী দলনেতা রাহুলকে ইঙ্গিত করেই ওই কথা বলেছেন। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’য় কংগ্রেস এবং তৃণমূল পরস্পরের শরিক।