PM Narendra Modi

লক্ষ্য ২০২৪, অক্লান্ত যাত্রা মোদী-রাহুলের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অন্য বছরের মতো এ বছরও নবরাত্রির ব্রত করছেন। প্রতি দিন দুর্গার বিভিন্ন রূপের পুজো করছেন। তা বলে রোজকার কাজকর্মে বিরতি নেই।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫৫
Share:

আলাপ: আমদাবাদ মেট্রোর উদ্বোধনে স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার। পিটিআই

এক জনের বয়স ৭২ বছর। অন্য জনের ৫২ বছর।

Advertisement

প্রথম জন নবরাত্রির সময়ে দিনে এক বার ফল ছাড়া কিছুই খান না। রাতে লেবুর সরবত। গত চল্লিশ বছর এমনই নিয়ম। এতে আত্মার শুদ্ধিকরণ হয় বলে বিশ্বাস করেন। দ্বিতীয় জন বিপাসনা করেন, শারীরিক ও মানসিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য।

প্রথম জন নরেন্দ্র মোদী। দ্বিতীয় জন রাহুল গান্ধী। দিল্লির রাজনীতিতে এখন দু’জনের ‘ফিটনেস’ অন্যতম চর্চার বিষয়।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অন্য বছরের মতো এ বছরও নবরাত্রির ব্রত করছেন। প্রতি দিন দুর্গার বিভিন্ন রূপের পুজো করছেন। তা বলে রোজকার কাজকর্মে বিরতি নেই। জাপান থেকে ঝটিকা সফর সেরে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। তার মধ্যেই ভিডিয়ো কনফারেন্সে অযোধ্যায় লতা মঙ্গেশকরের স্মৃতিতে লতা চৌমাথা উদ্বোধন করে চলে গিয়েছেন গুজরাতে। সামনে গুজরাতের ভোট। তার আগে সুরাত, ভাবনগরে নানা প্রকল্পের উদ্বোধন। আমদাবাদে ন্যাশনাল গেমসের উদ্বোধন, নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালু—ঠাসা কর্মসূচি। বিজেপি নেতারা বিস্মিত! এই বাহাত্তর বছর বয়সেও সারা দিনে এক বার ফলাহার ও লেবু-জল খেয়ে এমন অফুরন্ত ‘এনার্জি’!

রাহুল গান্ধী গত ২২ দিন ধরে হাঁটছেন। তামিলনাড়ু, কেরল হয়ে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কর্নাটকে ঢুকেছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কিলোমিটার হাঁটা হয়ে গিয়েছে। রোজ ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার হাঁটছেন। ভোরবেলা থেকে শুরু করে প্রথমে ১০ থেকে ১২ থেকে কিলোমিটার। তারপর বিকেলে ফের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার। সকালে হাঁটার শেষে কংগ্রেস নেতারা যেখানে পাচ্ছেন, মাদুর, ত্রিপল, বেঞ্চ, সেখানে শুয়ে পড়ছেন। রাহুল অক্লান্ত। দুপুরের বিরতিতে তিনি কোনও দিন সাংবাদিক বৈঠক করছেন। প্রায় রোজই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করছেন।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “রাহুল এমনিতেই বেশ জোরে হাঁটেন। বাকিরা এতখানি রাস্তা ওঁর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। তাই ওঁকে সবাই বলেছেন আস্তে আস্তে হাঁটতে। রোজ ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার হাঁটা হচ্ছে। রাহুল পারলে ২৫ কিলোমিটার হাঁটেন। কিন্তু বাকিদের পক্ষে অসম্ভব।”

কর্নাটকে পৌঁছেছে রাহুল গান্ধীর ভারত-জোড়ো যাত্রা। সেখানকার চমরাজনগর জেলায় হালকা মেজাজে কংগ্রেস নেতা। শুক্রবার। পিটিআই

শুধু প্রাণশক্তি নয়। উৎসাহেরও কমতি নেই। নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পততিবার আমদাবাদে গিয়ে পি ভি সিন্ধুর মতো ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় গল্পগুজব করেছেন। তার পরে সবরমতীর পাশে নবরাত্রির পুজো গরবা উৎসবেও যোগ দিয়েছেন। তাঁর নিজের লেখা গরবা সঙ্গীত গুজরাতি শিল্পীদের গাইতে শুনে মুচকি মুচকি হেসেছেন।

রাহুল কংগ্রেসের নেতাদের বলেছেন, তাঁর হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে। চলতে গিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যাও হচ্ছে। কিন্তু যখনই হাঁটু জানান দিতে চাইছে, তখনই কোনও সমর্থক, কিশোর-কিশোরী বা অন্য কেউ এসে তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যাচ্ছেন। কেউ হাতে চিঠি ধরিয়ে দিচ্ছেন। তাতে মুশকিল আসানের মন্ত্র লেখা থাকছে। নিমেষে হাঁটুর ব্যথা ভুলে যাচ্ছেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদী নবরাত্রিতে ফলাহার করলেও নিয়মিত যোগাভ্যাস, শরীরচর্চা করছেন। রাহুল গান্ধী আইকিডো, স্কুবা-ডাইভিংয়ের মতো খেলায় রীতিমতো প্রশিক্ষিত। সুযোগ পেলেই সাইকেল চালান। হাঁটার জন্য বেশ কয়েক জোড়া জুতো নিয়ে গিয়েছেন।

নরেন্দ্র মোদী জানেন, তাঁকেই দু’বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই তাঁকে শারীরিক ভাবে চাঙ্গা থাকতেই হবে। রাহুল গান্ধীর এখনও ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটা বাকি। এ বার দক্ষিণের কন্যাকুমারী থেকে উত্তরের কাশ্মীর পর্যন্ত যাত্রা করে আগামী বছর পূর্ব থেকে পশ্চিমে ভারত যাত্রা করতে চান তিনি। ‘ফিট’ থাকাটা তাঁর কাছেও চ্যালেঞ্জ।

এক জনের ৭২। অন্য জনের ৫২। দু’জনেরই লক্ষ্য ২০২৪।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement