প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
সামনেই রামনবমী। তার আগে এখন চৈত্র নবরাত্রি চলছে। এরই মধ্যে ভোটের ময়দানে আমিষ বনাম নিরামিষ বিতর্ক তুলে দেশবাসীর খাদ্যাভ্যাসেও মেরুকরণের চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নবরাত্রির সময় বা শ্রাবণ মাসে মাছ-মাংস খাওয়া বা তার ভিডিয়ো নেট-দুনিয়ায় দেওয়াকে ‘মোগলদের মানসিকতা’ বলে আজ বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন মোদী। নাম না করে রাহুল গান্ধী, লালু প্রসাদ, তেজস্বী যাদবদের নিশানা করেছেন। কারণ গত বছর রাহুল গান্ধী লালু প্রসাদের সঙ্গে পাঁঠার মাংস রান্না করার ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন। কিছু দিন আগে তেজস্বী ভোটের প্রচারে গিয়ে মাছ খাওয়ার ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, নবরাত্রি, শ্রাবণ মাসে দেশের একাংশের হিন্দুরা নিরামিষ খান বলে তাঁদের রুচি-পছন্দ মেনে বাকি অংশের মানুষকেও নিরামিষ খেতে হবে বা লুকিয়ে মাছ-মাংস খেতে হবে? ফেসবুক-টুইটারে প্রশ্ন উঠেছে, এর পরে কি দুর্গাপুজোর সময় মাংস খেয়ে ছবি দিলে সেটাও ‘মোগল মানসিকতা’ বলে নিন্দিত হবে? তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ময়নাগুড়িতে ভোটপ্রচারে গিয়ে বলেছেন, “বিজেপি শুধু আপনাদের ভোট চায় না। আপনারা কী পরবেন, কোথায় যাবেন, কী খাবেন, কাকে ভালবাসবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন, ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী সেটাও ঠিক করে দিতে চান। আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত বিজেপি নিতে চায়।’’
শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরের সভায় মোদী বলেন, ‘‘দেশের আইন কাউকে কিছু খেতে বাধা দেয় না। এই মোদীও কাউকে আটকায় না। সকলের স্বাধীনতা রয়েছে, নিরামিষ খান বা আমিষ খান।’’ এর পরেই তিনি রাহুল-লালু-তেজস্বীদের নাম না করে তাঁদের মাছ-মাংস খাওয়ার ভিডিয়োর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘ওঁরা এই সব ভিডিয়ো দেখিয়ে দেশের মানুষদের ব্যঙ্গ করেন। এঁদের মানসিকতা মোগলদের মতো।’’ মোদীর ইঙ্গিত, রাহুল-তেজস্বীরা শ্রাবণ মাসে, নবরাত্রির সময় মাছ-মাংস খাওয়ার ভিডিয়ো দেখিয়ে হিন্দুদের অপমান করে, সংখ্যালঘুদের তুষ্টিকরণ করতে চাইছেন।
বিজয়া দশমীর আগের নবরাত্রি বা দুর্গাপুজোর সময়, শ্রাবণ মাসে বা রামনবমীর আগে চৈত্র নবরাত্রিতে আমিষ খাওয়ার বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরেই প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হিন্দুত্ববাদীরা। আজ মোদী নিজে ভোটের প্রচারে এই বিতর্ক টেনে আনায় বিরোধীরা পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বলছেন, বেকারত্ব-মূল্যবৃদ্ধি থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন মোদী। এর আগে তিনি রামমন্দির, মুসলিম লিগ, পাকিস্তানের প্রসঙ্গ ভোটে টেনে মেরুকরণের চেষ্টা করেছেন। এখন দেশের খাদ্য, পরিধান, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মুছে দিয়ে সবার উপরে নিজের পছন্দমাফিক রুচি-অভ্যাস চাপিয়ে দিতে চাইছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাতে নিরামিশাষীরা জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি। বাকি গোটা দেশেই আমিষভোজীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের ৯৯ শতাংশই মাছ-মাংস বা ডিম খান। তা ছাড়া দুর্গাপুজোর সময় বাঙালিরা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি মাছ-মাংস খান। আবার ওই সময় কয়েকটি রাজ্যে হিন্দুরা নবরাত্রি উপলক্ষে নিরামিষ খান। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ জহর সরকার বলেন, ‘‘ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষ আমিষাশী। সেখানে নিরামিষের দাপট কেন থাকবে! হিন্দি বলয়ের বাইরে নবরাত্রির সময় নিরামিষ খাওয়ার প্রথা মানা হয় না। দুর্গাপুজোর সময় বাঙালিদের আমিষ খাওয়া ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অংশ। এটা আসলে সাংস্কৃতিক উপনিবেশকতাবাদ। হিন্দু ধর্মকে একই রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।’’
অভিষেক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আজকের ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী একটা সভা থেকে বলেছেন যদি কেউ মাছ খায়, সে হিন্দুবিরোধী! আপনারা মাছ খান মায়েরা?
দাদারা মাছ খান? কারা মাছ খান হাত তুলুন, আমিও খাই। ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সবাইকে হিন্দুবিরোধী বলছেন। আপনি একমত?” কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে একটিও কথা না বলে বরং কে কী খাবে বা খাবে না, তা নিয়ে যে ভাবে মন্তব্য করছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’