জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
‘প্যাকেজিং’টা কি এ বার কিছুটা বদলানো হচ্ছে ‘ব্র্যান্ড মোদী’র? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শাসকদল বিজেপি-র ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ বাড়ানোর জন্য? আর এই ভাবেই কি বিজেপি ফিরতে চাইছে ‘অচ্ছে দিন’-এ?
লোকসভা নির্বাচনের সময় ‘গুজরাত মডেল’-এর যে তকমাটা তাঁর গায়ে লাগানো হয়েছিল, গত আড়াই বছরে বিদেশ থেকে ততটা শিল্প-বিনিয়োগ না আসায়, এ বার কি সেই ‘প্যাকেজিং’টা কিছুটা বদলানোর কথা ভাবা হচ্ছে ‘ব্র্যান্ড মোদী’র? সম্ভবত তাই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৬৬তম জন্মদিনটিতেই শুরু হয়ে গেল তাঁকে ‘কর্মবীর’ হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস। শুরু হয়ে গেল ‘ব্র্যান্ড মোদী’র ‘প্যাকেজিং’ বদলানোর তোড়জোড়। গত আড়াই বছরে প্রায় তলানিতে পৌঁছে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’কে ঠেলে ওপরে তোলার প্রস্তুতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে বিধানসভা নির্বাচন পঞ্জাব, গুজরাত আর উত্তর প্রদেশে। তাতে ভাল ফল করতে হলে শুধুই প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘শিল্প-বন্ধু’ পরিচয়ে ততটা কাজ হবে না। কাজ হবে না গত লোকসভা নির্বাচনের সময়কার ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ দিয়েও। আর ‘উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি’র তকমাটাও দল হিসেবে বিজেপি-র কাজে লাগবে না। ‘ব্র্যান্ড মোদী’কে আরও বেশি করে আমজনতার কাছে পৌঁছতে হবে। পিছড়েবর্গের কাছে। শুধুই অর্থনৈতিক ভাবে নয়, যাঁরা শারীরিক ও মানসিক ভাবেও কিছুটা অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের কাছেও।
তাই আড়াই বছরের মধ্যেই ভোল বদলে গেল বিজেপি-র। ভোটে জেতার পর পরই যে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর জন্মদিন পালনে তীব্র অনীহা দেখিয়েছিলেন, সেই তিনিই নিজের জন্মদিনটিকে এ বার পালন করছেন একটু অন্য ভাবে, সাড়ম্বরে। বিশেষ কোনও বার্তা দিতে! প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে টেনে আনার লক্ষ্যে যেন কোমর বেঁধেই নেমে পড়েছে গোটা বিজেপি! প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্মদিনটিকে ‘সেবা দিবস’ পালনের ডাক দিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ শনিবার তেলঙ্গানায় ছুটেছেন ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এ শামিল হতে। ঝাড়ু হাতে নেমে পড়েছেন রাস্তাঘাট সাফ করতে, মন দিয়েছেন মানুষের সেবায়। বিজেপি সভাপতি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্মদিনটি বিজেপি-র লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক পালন করবেন নানা রকমের সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্ম করে।’’
সেই লক্ষ্যের অভিমুখ আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এ দিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর কর্মসূচিতেও। শনিবার সকালেই তিনি তাঁর জন্মদিনে মা হিরাবার আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন গাঁধীনগরে, দেখা করেছিলেন তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। আর তার পর যান গুজরাতের একটি উপজাতি-অধ্যুষিত জেলা দাহোড়ে। একটি সেচ প্রকল্পের উদ্বোধনে। সেখান থেকে যান লিমখেড়া মফস্সল শহরে, গাঁধীনগর শহর থেকে যা কম করে ২৫ কিলোমিটার দূরে। বিকেলে নবসারিতে যান শারীরিক বা মানসিক ভাবে অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন এমন মানুষজনের কল্যাণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে। তাঁদের দেওয়া হয় নানা রকমের অনুদান।
বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনটি পালন করতে গিয়েছেন দিল্লির কুষ্ঠ কলোনিতে। দিল্লির বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল এ দিন রাজধানীতে আয়োজন করেছেন একটি দৌড় প্রতিযোগিতার। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের গলাতেও এ দিন পাওয়া গিয়েছে সেই সুর, ‘‘প্রধানমন্ত্রী চান, উন্নয়নের সুফল সমাজের একেবারে তৃণমূল স্তরে গরিব মানুষের কাছেও পৌঁছে যাক। তা হলেই উন্নয়ন সার্বিক ভাবে কার্যকরী হবে। পুরোপুরি সফল হবে ‘অন্ত্যোদয়’ প্রকল্প।’’
বিশ্বে অন্য অনেক কিছুর অভাব থাকলেও, নিন্দুক সর্বত্রই আছেন ও থাকেন পর্যাপ্ত পরিমাণে।
এ ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিন্দুকরা বলছেন, ‘‘পণ্যের গুণমানে তেমন অদলবদল না ঘটিয়েও শুধুই ‘প্যাকেজিং’-এর জাঁক-জৌলুস বদলিয়ে যেমন বাজিমাত করতে চায় বিভিন্ন ‘ব্র্যান্ড’, এটাও সম্ভবত বিজেপি-র তেমনই একটা প্রয়াস।’’
কথাটা সত্যি কি না, বা তা কতটা সত্যি, ‘ব্র্যান্ড মোদী’র ‘ভ্যালু’ বাড়ল কি না, তা তিন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেই টের পাওয়া যাবে। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন- জন্মদিনে মায়ের সঙ্গে দেখা করলেন মোদী, টুইট করলেন ছবি
কলকাতা এ বার নতুন সাজে আনন্দ উৎসবে