ঘনঘন ‘বাজ’ পড়ছে, সরগরম দিল্লি

সংস্কার আটকে গিয়েছে। দিল্লিতে চলছে ‘বাজ’ রাজনীতি। দু’দিন আগে সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে বলেছিলেন, ‘হাওয়াবাজ’। আজ ভোপালে তার জবাব দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘হাওয়ালাবাজ’। দুপুর গড়াতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এল পাল্টা হামলা। ‘দাগাবাজ’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার ভোপালের দশম ভারতীয় হিন্দি সম্মেলনে। ছবি: পিটিআই।

সংস্কার আটকে গিয়েছে। দিল্লিতে চলছে ‘বাজ’ রাজনীতি। দু’দিন আগে সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে বলেছিলেন, ‘হাওয়াবাজ’। আজ ভোপালে তার জবাব দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘হাওয়ালাবাজ’। দুপুর গড়াতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এল পাল্টা হামলা। ‘দাগাবাজ’।

Advertisement

মোদী সরকারের এক বছর ঘুরতেই যে ভাবে কংগ্রেস গা-ঝাড়া দিয়েছে, তাতে কিছু ক্ষেত্রে পিছু হটতে হয়েছে মোদী সরকারকে। সংসদ মুলতুবি না করে সরকার আশায় ছিল, পরিবেশ ঠান্ডা হলে কংগ্রেস জমি বা পণ্য পরিষেবা কর বিলের সমর্থন করবে। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় বিল পাশের সম্মতি তো দেয়নি, উল্টে সনিয়া গাঁধীরা আগের থেকেও আক্রমণাত্মক হচ্ছেন। ‘হাওয়াবাজ’ বলে মোদীকে তীব্র আক্রমণ করছেন। তাই কংগ্রেসের গায়ে ‘উন্নয়ন-বিরোধী’ তকমা লাগিয়ে দিতে এ বারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদী।

আজ সকালেই সেই কাজের জন্য ভোপালে রাজনৈতিক মঞ্চটি বেছে নিলেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ছিলেন। ঘটনাচক্রে শিবরাজ-সুষমার ইস্তফার দাবিতেই সংসদের গোটা অধিবেশন ভন্ডুল করে রেখেছিল কংগ্রেস। সেখানেই সনিয়ার কথার জবাবে মোদী বলেন, ‘‘কালো টাকা নিয়ে আইন হওয়ার পর থেকে হাওয়ালাবাজরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। এই হাওয়ালাবাজরা গণতন্ত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। সংসদ চলতে দিচ্ছেন না।’’ শুধু সনিয়া নন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকেও ছেড়ে কথা বলেননি মোদী। তাঁর কথায় ‘‘এক সময়ে আমাদের যখন দু’জন সাংসদ ছিল, তখন রাজীব গাঁধী আমাদের উপহাস করতেন। আর আমাদের সহ্য করতে হত।’’ মোদীর দাবি, ‘‘আমরা পরাজয় থেকে শিখেছি। আমাদের দুর্বলতা দূর করে ত্রিশ বছর পর আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার বানিয়েছি। আর কংগ্রেস একসময় ৪০০ আসন থেকে এখন ৪০টি আসনে নেমে এসেছে।’’ এর পরেই মোদীকে পাল্টা আক্রমণ করেন সনিয়া। রায়বরেলীতে সনিয়া বলেন, ‘‘বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি কোনও উত্তর রয়েছে? মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদের দুর্নীতি নিয়েই বা মোদীজি চুপ কেন?’’

Advertisement

মা যখন উত্তরে, ছেলে তখন ছিলেন পূর্বে। ওড়িশার কৃষকদের নিয়ে ‘কৃষক বাঁচাও’ পদযাত্রায় বেরিয়েছিলেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি হাওয়াবাজ না বললেও রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিতে পটু। কিন্তু কাজে অষ্টরম্ভা! অচ্ছে দিন কোথায় গেল!’’ আবার একই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারকে ‘দাগাবাজ’ বলে মন্তব্য করা হয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে। আক্রমণের এই ভাষার পিছনে রাজনীতির অঙ্কও রয়েছে। কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতির তথা মানুষের জীবনে বড় কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। উপরন্তু খাদ্যের দাম বেড়েছে, অর্থনীতিও বেহাল এবং কর্মসংস্থানের বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়নি। সনিয়া-রাহুল সেখানেই আঘাত করে মোদী জনপ্রিয়তা কমাতে চাইছেন। কংগ্রেস ও বাকি বিরোধীদের চাপে সরকার জমি অধ্যাদেশ নিয়ে পিছু হটার ফলেও মা-ছেলে উজ্জীবিত। শুধু সমালোচনা করা নয়, পণ্য পরিষেবা কর বিল পাশ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার অবস্থানও নিয়েছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে দলের নেতাদের মত পরিষ্কার। তা হল, অতীতে নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করার ক্ষেত্রে ইতস্তত করে দল ভুল করেছে। তাই মোদী মডেল নিয়ে ‘হাওয়াবাজি’ করে বিজেপি পার পেয়ে গেছে। এখন কোনও বলই মাটিতে পড়তে দেওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় বিষয় হল, সরকারকে বিল পাশে সফল হতে দিয়ে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ নেই। খুচরো ব্যবসায়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, পণ্য পরিষেবা কর বিলে অতীতে বিজেপি যখন বাধা তৈরি করেছিল, তখন কংগ্রেসও এই নেতিবাচক রাজনীতি নিয়ে বিজেপি-বিরোধী প্রচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে ব্যর্থতার দায় চেপেছে কংগ্রেসের উপরেই। তাই এখন বিজেপির বিরুদ্ধে সেই নেতিবাচক রাজনীতিই করতে চাইছে কংগ্রেস। জমি বিল সংসদে পাশ না করাতে পেরে সরকারকে শিল্পমহলের অসন্তোষের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তখনই এই বিষয়ে সাফল্য উদযাপন করছে কংগ্রেস। শনিবার উত্তর ভারতের পাঁচটি রাজ্যের কৃষকেরা এ জন্য রাহুলকে ধন্যবাদ জানাতে আসবেন। তার আগে চলতি মাসের ২০ তারিখ কৃষকদের নিয়ে বড় সভাও করবেন রাহুল গাঁধী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement