প্রতীকী ছবি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংস্থার কর্মীদের বেতন থেকে ২০০ কোটিরও বেশি অর্থ জমা পড়েছে পিএম কেয়ার্স তহবিলে। তথ্যের অধিকার আইন (আরটিআই)-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমনটাই জানা গিয়েছে।
‘প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনস ফান্ড’ বা পিএম কেয়ার্স তহবিলে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বড়সড় অঙ্কের অর্থ জমা তো পড়েছেই। তা ছাড়াও দেশের অন্তত সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং আরও সাতটি অগ্রণী আর্থিক প্রতিষ্ঠান-সহ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)-র থেকেও ওই তহবিলে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা পড়েছে। যার মোট পরিমাণ ২০৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তার মধ্যে জীবনবিমা নিগম (এলআইসি) এবং জেনারেল ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (জিআইসি) এবং ন্যাশনাল হাউসিং ব্যাঙ্কের জমা অর্থের পরিমাণ ১৪৪ কোটি ৫ লক্ষ টাকারও বেশি। ওই সংস্থাগুলির কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর)-সহ অন্যান্য খাত থেকেও অর্থ ঢুকেছে পিএম কেয়ার্স তহবিলে। শুধুমাত্র জীবনবিমা নিগমই তহবিলে জমা দিয়েছে ১১৩ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৮ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা এসেছে ওই সংস্থার কর্মীদের বেতন থেকে। বাকি ১০০ কোটি ‘কর্পোরেট কমিউনিকেশন’ এবং আরও ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে ‘গোল্ডেন জুবিলি ফাউন্ডেশেন’ থেকে।
আরও পড়ুন: ডক্টর হাজরা কে? জবাব খুঁজছে গোটা পরিবার
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই তহবিলে সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। এসবিআই জানিয়েছে, তাদের জমা করা ১০৭ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার পুরোটাই এসেছে কর্মীদের বেতন থেকে। অন্য দিকে, আরবিআইয়ের দাবি, তাদের কর্মীরা স্বেচ্ছায় ৭ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ওই তহবিলে জমা করেছেন।
আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভের আঁচ রাজধানীতে, পুড়ল ট্রাক্টর, পঞ্জাবে অনড় চাষিরা
চলতি বছরের ২৮ মার্চ করোনার মোকাবিলা তথা এতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় পিএম কেয়ার্স তহবিল গঠন করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। দু’লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ওই তহবিল চালু হয়েছিল। তবে গোড়া থেকে পিএম কেয়ার্স নিয়ে বিতর্ক ছিল। বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল (পিএমএনআরএফ) থাকতে কেন পিএম কেয়ার্স তহবিল গঠনের প্রয়োজন দেখা দিল? পাশাপাশি, এই তহবিল গঠন করা হলেও এ নিয়ে সবিস্তার তথ্য জানাতে অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সেই সঙ্গে কোটি কোটি টাকা জমা পড়লেও গোড়া থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই তহবিলের হিসেব পরীক্ষা করতে দেওয়া হবে না সরকারি সংস্থা সিএজি (কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল)-কে। তার বদলে অন্য কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করানো হবে।
গত জুনে এ নিয়ে একটি আরটিআই-এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সাফ জানিয়ে দেয়, পিএম কেয়ার্স তহবিল আইটিআইয়ের আওতায় পড়ে না। যদিও পরে পিএম কেয়ার্স-এর ওয়েবসাইটে তহবিলে জমা অর্থের খতিয়ান পেশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, মার্চের শেষে তহবিল গঠনের পর প্রথম কয়েক দিনেই অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩১ মার্চের মধ্যেই ৩০৭৬ কোটি ৬২ হাজার টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে দেশের ভিতর থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৩০৭৫ কোটি ৮৫ হাজার টাকা। এবং বিদেশ থেকে জমা পড়েছে ৩৯ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা এসেছে। এ ছাড়াও, সুদ মিলেছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। তবে এই তথ্য তুলে ধরা হলেও কারা এই টাকা দিলেন, তা জানানো হয়নি। যা নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে মোদী সরকার। এর পর চলতি মাসে খানিকটা কৌশলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বেসরকারি ভাবে জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই ওই ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দান করেছেন। যা দিয়ে তহবিলের যাত্রা শুরু হয়। যদিও বিতর্কের সেখানেই থেমে থাকেনি। বিরোধীরা বরাবরই এই তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।