মুম্বইয়ের ফুটব্রিজে দুর্ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে রেল।
এ বার থেকে স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজ ও প্ল্যাটফর্মকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি জোনকে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
গত শুক্রবার মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন ও পরেল রেল স্টেশনের সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটি ভেঙে গিয়েছে বলে গুজব ছড়ানোর পরেই তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হন যাত্রীরা। ওই সময়ে ব্রিজ থেকে নামতে না পেরে কয়েক জন উপর থেকে লাফও মারেন। সব মিলিয়ে মৃত্যু হয় ২৩ জনের। আহত হন আরও ২০ জন।
শনিবার মুম্বইয়ে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে একটি বৈঠকের পরে রেলমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে জোনগুলিতে নতুন কমিটি করে সমস্ত ফুট ওভারব্রিজ এবং প্ল্যাটফর্মের হাল খতিয়ে দেখতে হবে। রেলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, যাত্রীদের দাবি মেনে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর আমলেই ওই ব্রিজটি নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। সেটির জন্য ১২ কোটি টাকা অর্থও বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছু হয়নি তা ২৩ জনের মৃত্যুই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
রেল সূত্রের খবর, যাত্রীদের সঙ্গে ওই ব্রিজটি দিয়ে প্রচুর সাধারণ মানুষও যাতায়াত করেন। পরেল স্টেশনটি মুম্বইয়ের জনবহুল এলাকায় হওয়ায় সেখানে শহরতলি থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। পরেল স্টেশনের পাশাপাশি রয়েছে এলফিনস্টোন স্টেশন। ফলে প্রতিনিয়তই হাজার হাজার লোক ওই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু সেই সংখ্যার তুলনায় ব্রিজটির প্রস্থ নেহাতই কম ছিল। তাই অনেক দিন ধরেই যাত্রীরা ব্রিজটি চওড়া করার জন্য দাবি জানাচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন: গরবা দেখার ‘অপরাধে’ দলিত খুন গুজরাতে
প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর আমলে নতুন করে যে ব্রিজটি তৈরি করার কথা হয়েছিল, বর্তমান ব্রিজের তুলনায় তা ৮ গুণ বেশি চওড়া। অভিযোগ, লাল ফিতের ফাঁসেই পরিকল্পনা ফাইলবন্দি থেকে গিয়েছে। বাস্তবায়িত হয়নি আজও। আর ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই গয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে নিরাপত্তা বিষয়ক প্রকল্পের পরিকল্পনা শেষ করে ১৫ দিনের মধ্যেই টাকার ব্যবস্থা করে নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কোনও জটিলতা তৈরি হলে তা রেল বোর্ডে পাঠাতে হবে। রেল বোর্ডকেও ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান সূত্র বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
মুম্বইয়ের দুর্ঘটনার পরে দেশ জুড়ে জনবহুল স্টেশনের ফুটব্রিজে সিসিটিভি বসানোরও পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। মুম্বইয়ের শহরতলির স্টেশনগুলি দিয়েই শুরু হচ্ছে এই ব্যবস্থা। শুধু ক্যামেরা বসানোই নয়। ক্যামেরার ছবি প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে আরপিএফকে। তা ছাড়া মুম্বইয়ের জনবহুল স্টেশনগুলিতে অতিরিক্ত এসক্যালেটর বা চলমান সিঁড়ি বসানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক।
পুলিশ জানিয়েছে, পদপিষ্টের ঘটনায় নতুন করে আর কোনও মৃত্যু হয়নি। কিন্তু শুক্রবার ভিড়ের মাঝে কারা ওই গুজব ছড়িয়ে দিয়েছিল তাদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।