পীযূষ গয়াল।
পীযূষ গয়াল বনাম পীযূষ গয়াল! মোদী সরকারের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী নিজেই নিজের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। নিজেই নিজের বিরোধিতা করলেন।
গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, চিন-সহ ১৬টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ালে ভারত ওই বিরাট বাণিজ্য গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যাঙ্ককে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের পরে সেই পীযূষই আজ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে একে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে এত দিন পীযূষের নেতৃত্বেই ভারত অন্য দেশগুলির সঙ্গে দর কষাকষি করছিল। আরএসএসের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ এর বিরোধিতা করেছিল। কংগ্রেসও সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে এতে আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু পীযূষ তা নিয়ে সনিয়া গাঁধীকে কটাক্ষ করেন। বলেছিলেন, মনমোহন সরকারের আমলেই তো এই দর কষাকষি শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে সেই পীযূষ গয়ালই সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করলেন, ‘‘আমরা দর কষাকষিতে তেমন উদ্যমী ছিলাম না। কিন্তু হঠাৎ করে আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ালে তিক্ততা তৈরি হত।’’
আরও পড়ুন: ইয়েড্ডির ‘স্বীকারোক্তি’, আদালতে সরব কংগ্রেস
পীযূষ গয়ালের এই ভোল বদলের পিছনে যাঁর প্রধান ভূমিকা, সেই স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা অশ্বিনী মহাজন আজ মুচকি হেসেছেন। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের দাবি ছিল, ভারত এই চুক্তি থেকে সরে আসুক। কারণ সস্তার পণ্য আমদানি হলে দেশের ডেয়ারি শিল্প, চাষি, ছোট ব্যবসায়ী থেকে ইস্পাত, গাড়ি শিল্পের ক্ষতি হবে। তা সত্ত্বেও পীযূষরা এই চুক্তি নিয়ে এগোনোয় আপত্তি তুলেছিলেন অশ্বিনীরা।
অশ্বিনী এ দিন বলেন, ‘‘সরকারের উপরে চাপ ছিল। সরকারকে কিছু লোক ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছিল।’’ কাদের চাপ, কারা ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছিলেন, তা নিয়ে অবশ্য তিনি মুখ খোলেননি। কিন্তু স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের চাপে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে আসাকে অশ্বিনীদের জয় হিসেবেই দেখছেন সরকারি কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, অর্থনীতি ধুঁকছে। ফলে আর্থিক নীতিতে আরএসএস-এর আর্থিক সংগঠনের নেতাদেরও ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অশ্বিনী অবশ্য একে নিজেদের জয় বলে আখ্যা দিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ‘‘এটা মানুষের জয়, প্রধানমন্ত্রীর জয়, সরকারের জয়।’’ অশ্বিনী বলেন, এই চুক্তি হলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্যে নেমে আসত। প্রায় ৮০ শতাংশ চিনা পণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্য হয়ে যেত।
এত দিন পীযূষ গয়ালের যুক্তি ছিল, সস্তার চিনা পণ্যের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হবে না। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে এক দেশ যখন আর এক দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, তখন ভারতের পক্ষে এই বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো লাভজনক হবে না। আজ সেই পীযূষেরই দাবি, ‘দেশকল্যাণ’ ও ‘জনহিতের’ কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী এই বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উল্টে কংগ্রেসকে ‘বিভ্রান্ত’ আখ্যা দিয়ে তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস এখন নিজের (বিগত) সরকারের নীতিরই বিরোধিতা করছে।
কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, পীযূষ গয়াল এখন চুক্তির বিরুদ্ধে না পক্ষে, সেই বিভ্রান্তি থেকেই গেল।