পিনারাই বিজয়ন।— ফাইল চিত্র।
বাইরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যে তাঁরা সকলেই সামিল। কিন্তু ঘরের মধ্যে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টে বিবাদ সামলাতে ফের সমস্যায় পড়েছে কেরলের সিপিএম সরকার!
এ বারের সমস্যা ফের পিনারাই বিজয়ন মন্ত্রিসভার এক সদস্যকে ঘিরে। কেরলে এলডিএফ সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী টমাস চান্ডি তাঁর ব্যক্তিগত সংস্থার রিসর্ট তৈরির জন্য সে রাজ্যের বিখ্যাত ‘ব্যাকওয়াটার্স’-এর অংশও জবরদখল করেছেন বলে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন আলপ্পুঝার জেলাশাসক। বিষয়টি এখন রাজ্যের ভূমি ও রাজস্ব দফতরের বিবেচনাধীন। যে দফতরটি রয়েছে বাম শরিক সিপিআইয়ের হাতে। তারা চাইছে, এই কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে অবিলম্বে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান চান্ডি। যিনি আবার এনসিপি-র মন্ত্রী এবং যাঁর সঙ্গে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের সুসম্পর্কের কথা কেরলের রাজনীতিতে সুবিদিত। এমন বিতর্কে বিড়ম্বনায় পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন।
মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে কেরল সিপিএমের প্রবীণতম নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন পরিবহণ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছেন। তাঁর যুক্তি, দুর্নীতি ও অন্যায়ের অভিযোগকে প্রশ্রয় দেওয়া কখনওই বাম সরকারের ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায় না। সম্প্রতি কেরলে দলের কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি। চান্ডির জমি দখল সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজস্বমন্ত্রী ই চন্দ্রশেখরন এবং সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁরা এই প্রশ্নে সুর নরম করতে নারাজ। আগামী এপ্রিলে কেরলের কোল্লমেই সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেস বসছে। তার আগে রাজনৈতিক লাইন তো বটেই, নীতিগত প্রশ্নেও পিছু হঠতে চাইছে না সিপিআই।
বিপদ বুঝে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন চান্ডিকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর কাছ থেকে ওই রিসর্ট ও তার সংলগ্ন রাস্তার জমির যাবতীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বিজয়ন এখনও মুখ খোলেননি। সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, পরিবহণ মন্ত্রীর আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি কতটা মজবুত, সেটাই আগে দেখে নিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আরব আমিরশাহি থেকে শারজার শেখ সুলতান বিন মহম্মদ আল কাসিমি রাজ্য সফরে এসেছেন। বিদেশি অতিথির সফর চলাকালীন রাজ্য তাদের ঘরোয়া বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও পদক্ষেপ করতে চায়নি।’’ চাপে পড়ে চান্ডি অবশ্য বলে রেখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী চাইলে তিনি ইস্তফা দেবেন। প্রসঙ্গত, বিজয়ন সরকারের প্রথম পরিবহণ মন্ত্রীও একটি বিতর্কের জেরে ইস্তফা দিয়েছিলেন। পরে স্বজনপোষণের দায়ে পদত্যাগ করতে হয় শিল্পমন্ত্রীকেও।
কেরলে এলডিএফের শরিক নেতৃত্ব বলছেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে যখন জাতীয় স্তরেও জোরদার লড়াই, সেই সময়ে একটা বাম সরকার এত দুর্নীতি, বেনিয়ম এবং স্বজনপোষণের অভিযোগে জড়িয়ে পড়বে কেন? ঘরে স্বচ্ছতার কড়া বার্তা দিতে না পারলে মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইও দুর্বল হবে বলে তাঁদের অভিমত।