প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতি এবং কর্তব্যের শর্তাবলি বদলে ফেলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে প্রায় বিরোধীশূন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাশ করানো হয়েছে বিতর্কিত বিল। তাতে রাষ্ট্রপতির সম্মতিও মিলেছে। সেই আইনে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র।
এ বার মোদী সরকারের সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। তাতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি ‘স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ’ কমিটি গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর কেন্দ্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের নতুন পদ্ধতি চালু করার উদ্দেশ্যে নয়া আইন কার্যকরের যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তা বাতিল করার আবেদনও জানানো হয়েছে ওই জনস্বার্থ মামলায়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দেশে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবে একটি কমিটি। এই কমিটির সদস্য হিসাবে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছিল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু মোদী সরকার প্রস্তাবিত কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নাম ছাঁটাই করে ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধি এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী’র নাম নিয়োগ কমিটিতে ঢোকাতে শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনারস’ (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশনস অফ সার্ভিসেস অ্যান্ড টার্মস অফ অফিস) বিল ২০২৩’ পাশ করায়।
নয়া আইন অনুযায়ী, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী দ্বারা মনোনীত এক জন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কমিটির বৈঠকে গৃহীত নাম যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনিই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নয়া আইনে পুরো ব্যবস্থা ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হতে পারে বলে অভিযোগ। আপাত ভাবে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও বহু বার তাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। শাসকদলের বেলায় নীরব আর বিরোধী দলগুলির ব্যবহারে অতিসক্রিয়, কমিশনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি ‘প্রকৃত’ শিবসেনা হিসাবে কমিশন শিন্ডেসেনাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় উদ্ধব ঠাকরের শিবির কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিল। উদ্ধব নিজে কমিশনকে ‘শাসক শিবিরের দলদাস’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।