ঘূর্ণিঝড়ে জলোচ্ছ্বাস। চেন্নাইয়ের কসিমেদু বন্দরে। রবিবার। এএফপি
ক্রমশ শক্তি বা়ড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘পেতাই’। আজ, সোমবার সে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে বলে দিল্লির মৌসম ভবনের পূর্বাভাস।
ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে। তবে তার প্রভাবে আজ, সোমবার এবং কাল, মঙ্গলবার কলকাতা এবং উপকূলবর্তী জেলায় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। আবহবিজ্ঞানীদের ধারণা, স্থলভূমির কাছাকাছি এসে শক্তি খোয়াতে পারে পেতাই। তাই সাদামাঠা ঘূর্ণিঝ়ড় হিসেবেই উপকূলে তার আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে মৌসম ভবন। তারা জানাচ্ছে, পেতাই উপকূলের কাছাকাছি আসবে সোমবার। ফলে অন্ধ্র ও তামিলনাড়ু উপকূলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় অন্ধ্রের মৎস্যজীবীদের সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্ধ্রের লাগোয়া এলাকা এবং গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ দানা বাঁধায় আন্দামান সাগরও উত্তাল হয়েছিল। তার ফলে নিল ও হ্যাভলক দ্বীপে আটকে পড়েন বহু পর্যটক। তাঁদের মধ্যে বিদেশি তো বটেই, প্রচুর বাঙালিও ছিলেন। দুর্যোগের পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজে নামে উপকূলরক্ষী বাহিনী। আন্দামানের উপকূলরক্ষী বাহিনী রবিবার জানায়, মোট ৭০৭ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদেরও উদ্ধারের কাজ চলছে। তবে সমুদ্র অনেকটাই শান্ত হয়েছে। আবহবিদেরা বলছেন, গভীর নিম্নচাপ থেকে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তা আন্দামানের দিক থেকে ক্রমশই অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে সরে এসেছে। সেই জন্যই তার দাপট কমেছে দ্বীপপুঞ্জ এলাকায়।
কলকাতা থেকে আন্দামান বেড়াতে গিয়ে দুর্যোগের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে আটকে পড়েছিলেন সঞ্চিতা দণ্ড। শনিবার গভীর রাতে হ্যাভলক থেকে তাঁদের উদ্ধার করে পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছে দেয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। রবিবার দুপুরের বিমানে কলকাতায় ফিরেছেন তাঁরা। সঞ্চিতাদেবী জানান, দুর্যোগের পরিস্থিতি দেখে তাঁরা হোটেল ছেড়ে জাহাজ ধরতে ফেরিঘাটের দিকে এসেছিলেন। কিন্তু প্রথম দিকের জাহাজে ঠাঁই পাননি। বাধ্য হয়ে ফেরিঘাটের কাছেই একটি হোটেলে ঘর ভাড়া নেন। ফেরিঘাটের কাছাকাছি হোটেলগুলিতে ভি়ড় থাকলেও থাকা-খাওয়ার সমস্যা হয়নি। শনিবার রাত ১২টার পরে জাহাজে ওঠেন তাঁরা। তখনও সাগর উত্তাল ছিল। তিনি বলেন, ‘‘আরও অনেকে ওই দ্বীপে রয়েছেন। পোর্ট ব্লেয়ারে ফেরার সময়েও সমুদ্র এতটাই উত্তাল ছিল যে, আমাদের রীতিমতো ভয় লাগছিল। দুলুনিতে এক জন সহযাত্রী চেয়ার থেকে পড়েও যান।’’
আন্দামানে দুর্যোগের পরিস্থিতিতে আশঙ্কায় ভুগছিলেন পর্যটকদের কলকাতাবাসী আত্মীয়-পরিজনও। সঞ্চিতাদেবীর বোনঝি তানিয়া মুখোপাধ্যায় উদ্বেগ নিয়ে বারবার যোগাযোগ করছিলেন আন্দামানে। মাসিরা নিরাপদে ফিরে আসায় স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। তানিয়া বলেন, ‘‘বিএসএনএল ছাড়া অন্য কোনও মোবাইল পরিষেবা আন্দামানে চালু ছিল না। তাই যোগাযোগে সমস্যাও হচ্ছিল, পাল্লা দিয়ে চিন্তাও বা়ড়ছিল।’’