প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজপথে রাহুল গাঁধীকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সৌজন্য বিনিময়ও হয়নি। কিন্তু রাজপথের গোটা প্যারেড জুড়ে নিতিন গডকড়ীর পাশে বসে দীর্ঘক্ষণ স্বচ্ছন্দে কথা বলেন রাহুল। এক দিন পরে সেই গডকড়ীই ফের বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদীকে।
মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে গডকড়ী বললেন, ‘‘স্বপ্ন দেখানোর নেতাকে লোকের ভাল লাগে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূর্ণ না হলে জনতাই তাঁকে পেটায়। এর জন্য সেই স্বপ্নই দেখানো উচিত, যেটি পূর্ণ হতে পারে। আমি যা বলি, একশো শতাংশ ডঙ্কা বাজিয়ে পূর্ণ করি।’’ শেষ লাইনটি গডকড়ী এর আগে বহু বার বলে এসেছেন। কিন্তু তার আগে ‘স্বপ্ন দেখানো নেতা’ কিংবা ‘স্বপ্নপূরণ না করলে জনতার পেটানো’ কথাটি নতুন সংযোজন। তাঁর ইঙ্গিত কোন দিকে, বুঝতে অসুবিধা হয়নি কোনও পক্ষেরই।
পাঁচ রাজ্যে বিজেপির হারের পর থেকেই ক্রমশই বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন গডকড়ী। একবার ভরা হাটে বলে ফেলেছিলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আমাকে বলেছেন, ‘অচ্ছে দিন’ স্লোগান তাঁর গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে।’’ তখন সেটি মুখ ফস্কানো মন্তব্য বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি তিনি কম করে তিন বার নাম না করে নরেন্দ্র মোদী-অমিতের সমালোচনা করেছেন। একবার বলেছেন, ‘‘আমি দলের সভাপতি হলে ব্যর্থতার দায় নিতাম।’’ আবার বলেছেন, ‘‘শুধু ভাল বক্তা হলেই ভোটে জেতা যায় না। যিনি ভাবেন সব জানেন, তিনি ভুল।’’ শুধু তাই নয়, যে মোদী কথায় কথায় নেহরুর সমালোচনা করেন, সেই নেহরুরও প্রশস্তি করেছেন গডকড়ী। সহিষ্ণুতার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। প্রথম কয়েক বার গডকড়ী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁর মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। বিরোধীরা বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে বিবাদ বাধানোর ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু পরের দিকে সে যুক্তি দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নেতাজি না মোদী, আগে কে? ‘মন কি বাত’ নিয়ে বিস্মিত অনেকেই
এখন ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারাও বলছেন, আসলে মোদী-শাহ জমানায় দলের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তারই প্রতিনিধিত্ব করছেন গডকড়ী। শরিক ও বিরোধীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আর আরএসএসের অভয় না থাকলে এই কাজটি বারবার করতে পারেন না তিনি। বছর দেড়েক আগে ঘরোয়া মহলে রাহুলই বলেছিলেন, বিজেপির আসন কমে গেলে শরিকরাই আর মোদীকে প্রধানমন্ত্রী চাইবেন না। বরং গডকড়ী, রাজনাথের মতো কাউকে চাইবেন। সম্প্রতি ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে উস্কে দিয়েছেন।