পাণ্ডুলিপিতে আমেজ ফিরল বইমেলায়

পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনীর জেরে উদ্বোধনের ৫ দিন পর নিজস্ব চেহারা ফিরে পেল শিলচর বইমেলা। ২৫ নভেম্বর উদ্বোধন হয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের বরাক বইমেলা, শিলচর। শুরু থেকেই নোট বাতিলের ছাপ স্পষ্ট ছিল মেলাপ্রাঙ্গণে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪১
Share:

বইপোকা। বুধবার করিমগঞ্জের বইমেলায়। উত্তম মুহরীর তোলা ছবি।

পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনীর জেরে উদ্বোধনের ৫ দিন পর নিজস্ব চেহারা ফিরে পেল শিলচর বইমেলা।

Advertisement

২৫ নভেম্বর উদ্বোধন হয়েছে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের বরাক বইমেলা, শিলচর। শুরু থেকেই নোট বাতিলের ছাপ স্পষ্ট ছিল মেলাপ্রাঙ্গণে। কলকাতা-সহ বাইরের প্রকাশক-বিক্রেতারা প্রথম ধাক্কা খান করিমগঞ্জ জেলার রামকৃষ্ণনগরে। তবু শুরুর কয়েক দিন সেখানে ভাল বিক্রি হওয়ায় পুষিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাইলাকান্দিতে লোকসান মাত্রা ছাড়ায়। এর দরুন অনেকেই আর শিলচরমুখো হননি। তাদের জন্য বরাদ্দ স্টলগুলি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। একই কারণে পাঠকরাও বইমেলার আমেজ ঠিকঠাক পাচ্ছিলেন না এ বার। সেই আক্ষেপটাই পুষিয়ে দিল পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনী। গত কাল তার উদ্বোধন হয়।

পাণ্ডুলিপি নিয়ে এই অঞ্চলে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ চলছে। শিলচর গুরুচরণ কলেজে ‘ন্যাশনাল ম্যানুস্ক্রিপ্ট মিশনের’ শাখাও রয়েছে। সেই সুবাদেই পাণ্ডুলিপির প্রতি আগ্রহ এই অঞ্চলের মানুষের। কিন্তু অনেকের পক্ষে পাণ্ডুলিপি দেখার সুযোগ মেলেনি। বইমেলায় চোখের সামনে এমন প্রাচীন সম্পদ দেখতে পেয়ে তাঁরা উৎফুল্ল। লালরঙের শালু কাপড় থেকে শুরু করে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রতিটি পর্যায় দেখানো হয়েছে প্রদর্শনীতে। হাতে লেখা পুঁথিরও যে কত রকমভেদ, তুলে ধরা হয়েছে সে-সবও।

Advertisement

বরাক উপত্যকার ইতিহাস ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস নারীশক্তি বা অশ্রুমালিনী, এ কথা অনেকেই জানেন। সেই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি দেখে বিস্মিত আজকের প্রজন্ম। অনেকে দু-এক শব্দ পড়ার চেষ্টা করেন। কাঁচের ভিতরে উঁকি-ঝুকি করে অনেকে দেখতে চান কীসের উপর এমন লেখা। প্রদর্শিত হয়েছে কৃষ্ণদাস গোস্বামীর লেখা ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’ এবং রামকুমার নন্দীমজুমদারের ‘বীরাঙ্গনা পত্রোত্তর’ কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপিও। ১১০৩ বঙ্গাব্দের দাসী বিক্রির এক দলিলও দেখানো হয়েছে।

প্রদর্শনীটি আসলে সুরমা সাহিত্য সম্মিলনী ও শ্রীভূমি পত্রিকা প্রকাশের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের অষ্টম অনুষ্ঠান। বছরভর নানা অনুষ্ঠানে শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন হচ্ছে এখানে। সেজন্য পৃথক উপ-সমিতিও রয়েছে। পাণ্ডুলিপি উপসমিতির সভাপতি শেখর দেবরায় জানান, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এই অঞ্চলের নানা ইতিহাস বহন করছে। লোকসংস্কৃতির গবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য, তুষারকান্তি নাথ, দিলীপ নাথ এই ইতিহাস উদ্ধারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। অমলেন্দুবাবুর প্রয়াসে ন্যাশনাল ম্যানুস্ক্রিপ্ট মিশনের সেন্টার এখানে এসেছে বলে জানিয়েছেন গুরুচরণ কলেজের অধ্যক্ষ বিভাস দেব।

অমলেন্দুবাবু জানান, এই অঞ্চলে অজস্র পাণ্ডুলিপি রয়েছে। রামচন্দ্র চৌধুরীর লেখা ঐতিহাসিক কাব্য ‘কনেষ্ট ভারথ’ ও প্রেমেন্দ্রমোহন গোস্বামীর ‘জয়বাংলা’ নাটকের কথা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেন। বলেন তর্কনিধি বেদাচার্য কৈলাশচন্দ্র ভট্টাচার্যের পাণ্ডুলিপির কথাও। অমলেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘এখনও বহু পাণ্ডুলিপি মানুষের বাড়িঘরে রয়ে গিয়েছে। যেগুলি উদ্ধার হয়েছে, এরও অধিকাংশের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি।’’ এই কাজটুকু করা গেলে আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা নতুন বাঁক নেবে বলেই তিনি মনে করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে জোর দেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী। তিনি জানান, ১৯১৪ সালে শিলচরে শ্রীহট্ট-কাছাড় অনুসন্ধান সমিতি গঠনের মাধ্যমে সম্মিলিত প্রয়াসে আঞ্চলিক গবেষণা শুরু হওয়ার সূত্রে বহু পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত হয়েছিল। এই প্রদর্শনী উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাল বইমেলার মঞ্চে প্রকাশিত হয় মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি পরিচিতি নিয়ে মলয় দেবের তথ্যপুস্তিকা। উন্মোচন করেন গুরুচরণ কলেজের অধ্যক্ষ বিভাস দেব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement