নতুন বছরের প্রথম দিন রাস্তা নির্মাণে পূর্ত বিভাগকে বাধ্য করার শপথ নিলেন শিলচর শহরের বৃহত্তর মালুগ্রাম অঞ্চলের মানুষ।
এমন দিনে কেউ ঠিক করেন, এ বছরে একটা গাড়ি কিনবেন। কেউ ভাবেন, যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত ঋণ শোধ করবেন। দোকানে বেশি করে পণ্যসামগ্রী তোলার পরিকল্পনা করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মালুগ্রাম, ঘনিয়ালা, ইটখলার মানুষ আজ সকালে সভায় মিলিত হলেন রাস্তা নির্মাণের দাবি আদায়ে কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে।
শহরের ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল করছেন। এক সময় এই রাস্তায় বিটুমিনের প্রলেপ ছিল, বিশ্বাস করা কঠিন। পাথরের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারা এলাকা জুড়ে। আবেদন-নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে গত বছর ‘রাস্তা রোখো’র ডাক দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। বিভাগীয় কর্তারা সেখানে গিয়ে রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে আশ্বাসমতো ঘনিয়ালা ও মালুগ্রামের রাস্তায় কংক্রিকের ব্লক বসানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু ভোট ফুরোতেই কাজ বন্ধ। দু’দিন আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের এক প্রতিনিধিদল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি পূর্তকর্তাদের তলব করেন। তখনই জানা যায়— সেই অঞ্চলের রাস্তার জন্য কোনও অর্থবরাদ্দই নেই। মালুগ্রাম, ঘনিয়ালা বা ইটখলার রাস্তার জন্য সরকারের কাছে কোনও প্রস্তাবও পাঠানো হয়নি। ভোটের আগে যে কাজ করা হয়েছিল, তা মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ প্যাকেজে করা হচ্ছিল। নতুন সরকার ওই প্যাকেজের সমস্ত কাজ বন্ধ রেখেছে।
এতে ক্ষুব্ধ বৃহত্তর এলাকার মানুষ। পূর্ত বিভাগের উপর আস্থা হারিয়ে তাঁরা জেলাশাসকের কাছে দ্রুত রাস্তা সংস্কারের আর্জি জানান। জেলাশাসক পূর্তকর্তাদের শহরের এই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে নির্দেশ দেন। তিনি সে দিন পূর্ত কমিশনার মোহন বড়োর সঙ্গে কথাও বলেন। পরে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করে জানান, ওই রাস্তার বিষয়টি তিনি সরকারের নজরে আনবেন।
এই সব ব্যাপারে অবগত করে পরবর্তী কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে আজ বছরের প্রথম দিনে নাগরিকসভার আয়োজন করে ইয়ুথ অ্যাগেনস্ট সোশ্যাস ইভিল (ইয়াসি)-সহ কয়েকটি সংগঠন। বৃহত্তর মালুগ্রাম অঞ্চলের রাস্তা নিয়ে এই সময়ে সরকার কিছু ভাবছে না জেনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত সবাই। অজয় দেবলস্কর, ধ্রুবকুমার সাহা, দিলীপ সী-র মতো প্রবীণরাও জোরদার আন্দোলনের প্রস্তাব দেন। ইয়াসির প্রধান সঞ্জীব রায় বলেন, ‘‘আগের মতো রাস্তা রোখো করলেই সরকারের টনক নড়ানো যেতে পারে।’’
ধ্রুববাবু জানান, জেলাশাসকের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলায় কিছু দিন অপেক্ষা করা হবে। এর মধ্যে তাঁরা পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় দেবের সঙ্গে দেখা করে জেলাশাসকের কাছে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন। পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর আগামী সফরের সময় তাঁর সঙ্গেও কথা বলবেন। এর পরও গড়িমসি চলতে থাকলে রাস্তা রোখো ও অন্যান্য আন্দোলনে ঝাঁপাবেন বলে ধ্রুবকুমার সাহা জানিয়ে দেন। তাঁর বক্তব্য, নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই সমবেত হওয়ার একটাই লক্ষ্য, রাস্তা নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তাঁরা এ নিয়ে সরব হবেন।