জম্মু-কাশ্মীরের জেলা উন্নয়ন পর্ষদের দ্বিতীয় পর্বের ভোটে। মঙ্গলবার শ্রীনগরে। পিটিআই
কোনও কোনও কেন্দ্রে একটিও ভোট পড়েনি। কোথাও আবার সংখ্যাটা ৩, ৪ কিংবা ১২। জম্মু-কাশ্মীরের জেলা উন্নয়ন পর্ষদের দ্বিতীয় পর্বের ভোটে আজ এমনই ছবি জঙ্গি অধ্যুষিত পুলওয়ামা জেলায়। তবে অন্যত্র পরিস্থিতি উল্টো। প্রবল শীতের মধ্যেও সকাল সাতটা থেকেই সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন উৎসাহী মানুষ।
জম্মু-কাশ্মীরে গত তিন দশকে এ বারই প্রথম বয়কটের ডাক ছাড়া ভোট হচ্ছে। এমনকি, গত বছরের অগস্টে জম্মু-কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা হারানোর পরে এখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তার পরেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে বয়কটের ডাক না থাকলেও আজ পুলওয়ামা জেলায় অধিকাংশ ভোটারই ঘর ছেড়ে বুথে আসেননি। নিকাস-আরাবল, চাঁদপোড়া, হানজন বালার বুথগুলিতে ভোট পড়েনি একটিও। পুলওয়ামা জেলার গুলশনবাদে ৩টি, রাজপোরা এবং টিকেন বাতপোরায় ৪টি, বেল্লোয় ১২টি, কালামপোরায় ২৫টি, অরিগামে ৬৪টি ভোট পড়েছে। শাদিমার্গ কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৬৬৮ জন ভোটার। ভোট দিয়েছেন ৩২২ জন। অর্থাৎ গোটা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ১.৩৬ শতাংশ।
তবে শ্রীনগর-সহ কাশ্মীরের অন্য এলাকায় বহু মানুষ সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এই উৎসাহের কারণ তুলে ধরেছেন শ্রীনগরের এইচএমটি এলাকার ভোটার সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ভোটে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই শিক্ষিত। এঁদের কেউ প্রথমবার ভোটে লড়ছেন। ফলে মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ রয়েছে।’’ শহরের কমেরওয়াড়ি এলাকার একটি বুথে ভোটার রয়েছেন ৬৬৩ জন। দুপুর দু’টোতেই সেখানে ৪৮৩টি ভোট পড়ে গিয়েছে। বুথের বাইরে দাঁড়িয়ে এক দল ভোটার বললেন, ‘‘ফলের ব্যবসার উপর আমাদের রোজগার নির্ভর করে। আর এখানে আপেলের বাগানও রয়েছে অনেক। কিন্তু যথেচ্ছ কীটনাশকের ব্যবহার ফসলের ক্ষতি করছে। আমরা যাঁকে চাইছি, তিনি ফলের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাদের কাছে শপথ নিয়েছেন, জিতলে ফলের ব্যবসার উন্নতি ঘটাবেন আর এই ধরনের কীটনাশকের ব্যবহারও বন্ধ করাবেন।’’ তাৎপর্যের বিষয় হল, জেলা উন্নয়ন পর্ষদের ভোটে রুটি-রুজির বিষয় বিরাট ভাবে সামনে চলে এসেছে। ভোটারদের অনেকেই বলছেন, তাঁরা এমন প্রার্থীকে জেতাতে চান, যিনি তাঁদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করবেন। শ্রীনগরের ড্র্যাঙ্গ এলাকার ভোটার ইশফাক নাসিম বলেন, ‘‘তিন দশক ধরে শুধুই অনিশ্চয়তার মধ্যে বেঁচে রয়েছি আমরা। তাঁকেই জেতাতে চাই, যিনি আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন।’’ রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার কে কে শর্মা জানিয়েছেন, জেলা উন্নয়ন পর্ষদের দ্বিতীয় পর্বের ভোটে ৪৩টি কেন্দ্রে গড়ে ৪৮.২ শতাংশ ভোট পড়েছে। জম্মু ডিভিশনে ৬৫.৫৪ শতাংশ এবং কাশ্মীর ডিভিশনে ৩৩.৩৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।