উত্তরপ্রদেশে এই মোদী ঝড়ের আসল কারণ কী?—ফাইল চিত্র
উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপি-র বিপুল জয় আসলে নরেন্দ্র মোদীর জয়। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে কোনও প্রার্থী ছিলেন না। মূল লড়াইটা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের। মায়াবতী ব্যঙ্গ করে এ কথাও বলেছিলেন যে, নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করছেন। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, কুপোকাত্ মায়াবতীর হাতি।
কিন্তু, ২০১৪ সালের ভোটে দেখা নরেন্দ্র মোদীর ঝড় এখনও ভয়ঙ্কর ভাবে বিদ্যমান। সত্যি কথা বলতে কি, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, এমনকী আরএসএস-এর বহু নেতা বিজেপি জিতবে এমনটা আশা করলেও এ রকম ঝড় হবে সেটা ভাবেননি। কোনও বুথ ফেরত্ সমীক্ষাই বিজেপিকে এত আসন দিতে রাজি হয়নি। আর এখানেই ভারতীয় গণতন্ত্রের মজা।
তবে এই বিপুল বিজয়ে মোদীত্বের যে জয় হল, তাতে তাঁর নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব দল ও সরকারের মধ্যে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হল। এর ফলে আগামী দিনে বিজেপি রাজ্যসভায় তার আসল সংখ্যার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পেল। দ্বিতীয়ত, জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজস্ব দলীয় প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ পেল বিজেপি।
প্রশ্ন হল, তিন বছর পর গোটা দেশ জুড়ে মোদী ঝড় যদি থাকত তবে পঞ্জাবে অকালি-বিরোধী অসন্তোষের হাওয়াকে মোদী হাওয়া দিয়ে মোকাবিলা করা যেত। গোয়াতেও সেই হাওয়ার নমুনা কি দেখা গিয়েছে?
আরও পড়ুন: বেনজির গেরুয়া ঢেউ উত্তরপ্রদেশে, শোচনীয় ভরাডুবি সপা-কং-বসপার
জয়ের পর উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সমর্থকদের উল্লাস।—ফাইল চিত্র
উত্তরপ্রদেশে এই মোদী ঝড়ের তবে আসল কারণ কী? ধর্মীয় মেরুকরণ?
ধর্মীয় মেরুকরণ নিশ্চয়ই একটা অন্যতম কারণ। কিন্তু, এ বার গত বারের মতো প্রাক্-নির্বাচনী দাঙ্গা হয়নি। মেরুকরণের কৌশলও এ বার ছিল ভিন্ন। অনেকটাই বিবৃতিকেন্দ্রিক। এবং সেটিও তিন কিস্তি ভোট হয়ে যাওয়ার পর। মেরুকরণের ফলে উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোট কংগ্রেস এমনকী বসপা-র দিকে না গিয়ে বিজেপি-র দিকেই এসেছে। আবার শুধুমাত্র মেরুকরণের জন্য বিজেপি জিতেছে এ কথা বলাটাও বোধহয় অতি-সরলীকরণ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, মোদী এ বার কিন্তু শুধু হিন্দুত্ব নয় বিকাশেরও তাসটা নিজের হাতেই রেখে দিয়েছেন। মোদী এসেছিলেন মনমোহন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার আবহে। মনমোহন সরকারের নীতিপঙ্গুতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদী এক প্রধান ‘মসিহা’ হয়ে ওঠেন। আজ এটা স্পষ্ট যে, সেই মসিবার ভূমিকা আজও সামান্য ক্ষয় হলেও আছে একই ভাবে। বরং মনমোহনের বিরুদ্ধে বিফলা কোনও বিকাশের ‘মডেল’ কি অখিলেশ যাদব-রাহুল গাঁধী তিলে ধরতে পেরেছেন? যদি কোনও বিকল্প উন্নয়নের দিশা বিরোধীরা দেখাতে না পারে তা হলে মোদীর ক্ষেত্রেও সেই টিনা (দেয়ার ইজ নো অলটারনেটিভ) ফ্যাক্টর এসে যায়।
নরেন্দ্র মোদীর দল উত্তরপ্রদেশে একটিও মুসলমান প্রার্থী দিল না, অথচ তিনি মুসলমান ভোট পেয়েছেন। ২৫টি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি এগিয়ে। বোরখাধারী মুসলমান মহিলারা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, যে তাঁরা তালাকের ইস্যুতে বিজেপি-র পক্ষে।
অতএব নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের রাজনীতিতে এক অবতার। অবতারের প্রতি আস্থা যখন থাকে, মানুষের তখন যুক্তির চেয়েও ভক্তি অনেক বড় ইস্যু হয়ে যায়!
উত্তরপ্রদেশের ভোটাররা ভক্তি প্রদর্শন করলেন মোদীকেই। নোট স্থগিতের সিদ্ধান্তেও রাজ্যের গরিব মানুষের ধারণা হয়েছে মোদী ধনীতন্ত্রের বিরুদ্ধে। জয় গণতন্ত্রের জয়!