কাজ ভাল হচ্ছে। কিন্তু প্রচার নেই। তাই কাজের সুফল তো মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেই না, উল্টে পাল্টা আক্রমণের জোরে লাভের গুড় খাচ্ছে বিরোধীরা। নোট বাতিলের পরে এই উদ্বেগই এখন গ্রাস করেছে নরেন্দ্র মোদী শিবিরকে। সে জন্যই বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে বেঙ্কাইয়া নায়ডুর প্রস্তাব, নোট বাতিলের সুফল বোঝাতে আমজনতার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুর। ভোটের প্রচারে গিয়ে নোট বাতিলের পক্ষে সরব হয়েছিলেন বিজেপির এক নেতা। স্রেফ মুখ খোলার অপেক্ষা। রীতিমতো মারধর করে তাঁকে গ্রামছাড়া করেন স্থানীয়রা। বেঙ্কাইয়া অবশ্য বলছেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই সমস্যার কারণ হল, লোকের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ হচ্ছে দল। মানুষের সঙ্গে দূরত্বও বাড়ছে সেই কারণে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের সাংসদদের মানুষের কাছে পৌঁছনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মোদীর উপস্থিতিতে দলের সাংসদদের বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছচ্ছে না। উল্টে বিরোধীদের অপপ্রচারে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধিতার স্বর জোরালো হচ্ছে।’’ সংসদীয় দলের বৈঠকে মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী। কী ভাবে জোরালো প্রচার করতে হবে, তা ব্যাখ্যা করেন বেঙ্কাইয়া। তাঁর পরামর্শ, প্রত্যেক সাংসদকে নিজের এলাকায় মানুষের মধ্যে পৌঁছে ছোট ছোট সভা করতে হবে। বোঝাতে হবে সরকারি কাজগুলির সুফল। জনসংযোগ বাড়াতে সাংসদদের নিজের কেন্দ্রে অনেকটা সময় কাটানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, মোদী সরকারের আড়াই বছর কেটে গিয়েছে। কিছু দিন পর থেকেই জাতীয় রাজনীতির অভিমুখ লোকসভা নির্বাচনমুখী হয়ে উঠবে। তাই এখন থেকেই সাংসদদের মাঠে নামিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি। তবে এই মুহূর্তে দলের মূল লক্ষ্য হল, উত্তরপ্রদেশে ভাল ফল করা। বিজেপির নিজস্ব সমীক্ষা বলছে, যত দিন যাচ্ছে সে রাজ্যে লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। প্রথমে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, পরে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত— ব্যর্থ হয়েছে দুই ব্রহ্মাস্ত্রই। বসে গিয়েছেন বরুণ গাঁধী। যোগী আদিত্যনাথের মতো কট্টর বিজেপি নেতা দলের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের প্রার্থী দিয়েছেন প্রায় কুড়িটি আসনে। লোকসভা ভোটের সময়ে যে জাঠেদের সমর্থন নিয়ে হইহই করে উত্তরপ্রদেশে জিতেছিল বিজেপি, এ বার মুখ ফিরিয়েছে তারাও। শেষ মুহূর্তে জাঠেদের সংরক্ষণ দেওয়ার সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে অমিত শাহ যতই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ভাল ফল করার আশা কম বলেই মনে করছেন সেই অঞ্চলের সাংসদেরা।
নোট বাতিল নিয়ে মানুষের সামনে তথ্যের অভাব ও এ নিয়ে সরকারি স্তরে আমলাদের নীরবতা সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিজেপির অনেক সাংসদ। সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সামনে
এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া ও আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস। কিন্তু নোট বাতিল নিয়ে তাঁরা স্পষ্ট জবাব না দেওয়ায় বৈঠকে বিজেপিরই সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এত ভাল পদক্ষেপ করেছেন। অথচ আপনারা তার ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’’ বিজেপির একটি অংশ মনে করছে, সঠিক ভাবে প্রচারের অভাবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে পর্যাপ্ত ফায়দা নিতে ব্যর্থ হয়েছে দল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে চলেছে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে। এর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অর্থ মন্ত্রকের আমলাদের মনোভাবকেও দায়ী করছেন তাঁরা।
পরিস্থিতি যে কঠিন, তা মানছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির কারণে বিরোধী স্বর শোনা না গেলেও,বিজেপি নেতাদের একাংশ ঘরোয়া ভাবে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এই শিবিরের বক্তব্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দলীয় স্তরে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেননি মোদী-অমিত শাহ। কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হওয়ায় সেই পদক্ষেপের ‘ইতিবাচক’ দিকগুলি বোঝানোর দায় তাঁদের ঘাড়ে পড়েছে। যা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপি কর্মীদেরই।