পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাট। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণের তামিলনাড়ুতে দু’জন বাম এবং কেরল থেকে মাত্র এক জন সাংসদ। বাংলার মতো রাজ্যে লোকসভা তো বটেই, বিধানসভাতেও এক জনও প্রতিনিধি নেই! এমন নির্বাচনী বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে সিপিএমের কোনও পার্টি কংগ্রেস হল স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে এই প্রথম। ভোটে ভরাডুবির ধাক্কায় হতাশার সুর উঠে এল রাজ্যে রাজ্যে প্রতিনিধিদের কথাতেও। আর তারই মোকাবিলায় সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বকে নতুন করে নেতা-কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিতে হল, শুধু ভোটে জেতার জন্যই বামপন্থী দল তৈরি হয় না। আদর্শে বিচ্যুত না হয়ে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই মূল লড়াই।
দল ও সংগঠনের নজর সাবেক লক্ষ্যে ফেরানোর জন্য ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে এ বার অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করে পার্টি কংগ্রেসে পেশ করেছেন তিনিই। রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে এবং বিতর্কের পরে জবাবি ভাষণে মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দলের অতীতের তাবড় নেতারা নির্বাচনে চমকপ্রদ সাফল্যের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন, এমন নয়। তিনি বা তাঁর মতো অনেকেই এমন জায়গায় দলের কাজ করেছেন, যেখানে অনেক সময়ে দলের প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগও থাকে না! বাম কর্মীদের কাছে ভোটে জয়-পরাজয়ই একমাত্র মাথা ঘামানোর বিষয় নয়। লড়াই অনেক বড়।
পরে এই বিষয়ে কারাটের ব্যাখ্যা আরও সোজা-সাপ্টা। তাঁর সাফ কথা, ‘‘সিপিএম বা কমিউনিস্ট পার্টি যত নির্বাচন লড়েছে, তার মধ্যে জিতেছে কত বার? ভোটে হারই হয়েছে বেশি। আমরা ভোটে হেরেই থাকি! কিন্তু দলটা তো শুধু ভোটের জন্য নয়।’’ তিনি উদাহরণ দিয়েছেন বাংলার। বলেছেন, ‘‘ইউপিএ-১ আমলে যখন বামেদের সর্বোচ্চ সংখ্যার সাংসদ ছিল, তাঁদের বড় অংশ জিতে এসেছিলেন বাংলা থেকে। বাংলায় দল যখন ভোটে জিতত, জাতীয় স্তরেও দলকে বড় মনে হত। বাংলা আর ত্রিপুরায় নির্বাচনী ব্যর্থতা আসতেই ছবিটা উল্টো হয়ে গিয়েছে!’’
সিপিএমের বর্ষীয়ান এই পলিটবুরো সদস্য বোঝাতে চেয়েছেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতিবাদ, সামাজিক ন্যায় বা ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াই নিরন্তর জোরালো ভাবে করতে পারলে তার ভিত্তিতেই মানুষের সমর্থন বামপন্থীরা ফিরে পেতে পারে। যে সব রাজ্যে বিজেপি বা আরএসএস শক্তিশালী ছিল না, সেখানে তাদের প্রভাব বাড়ছে কেন— এই ভাবনা এবং ওই আগ্রাসন প্রতিহত করার চেষ্টা শুধু নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে কাটাছেঁড়ার চেয়েও বেশি জরুরি বলে কারাটের মত।
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফের নির্বাচিত হয়ে সীতারাম ইয়েচুরিও বলেছেন, ‘‘হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতা এবং দেশের সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আক্রমণ মোকাবিলাই এখন লক্ষ্য। যৌথ ভাবে, সকলকে দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ করতে হবে।’’ ইয়েচুরি উল্লেখ করেছেন, অনেক রাজ্যের প্রতিনিধিরা বলেছেন হিন্দুত্বের জোয়ারে বিজেপি মানুষকে প্রভাবিত করে ফেলছে। অন্য অঙ্ক তেমন খাটছে না। ধর্মীয় আবেগ নিয়ে দলের অবস্থান কী হবে? ইয়েচুরির কথায়, ‘‘আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রশ্ন। সেই বিশ্বাস পালনের অধিকার মানুষের আছে। কিন্তু কোনও একটি ধর্মের নামে অন্য বিশ্বাসের মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া, অত্যাচার-জুলুম কোনও ভাবেই মানা যায় না।’’ হিজাব, হালাল আজ়ান— এ রকম নানা অছিলায় বিজেপি-আরএসএসের বিভাজন কৌশলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে জওহর স্টেডিেয়ামে পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে সমাবেশেও।