প্রকাশ কারাট।
এক কালে বাম আন্দোলনের খুব চেনা স্লোগান ছিল, ‘নেহি চলেগা’! সিপিএমের এ বারের পার্টি কংগ্রেসেও মূল মন্ত্র হয়ে দাঁড়়িয়েছে সেই ‘নেহি চলেগা’! প্রকাশ কারাটেরা বলছেন, কংগ্রেস নেহি চলেগা। আর তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়়িয়ে অন্যেরা বলছেন, কারাটের ‘দাদাগিরি’ নেহি চলেগা!
দলের রণকৌশলের প্রশ্নে ভিন্ন মত মেনে নিয়েই পার্টি কংগ্রেসে দু’টি খসড়়া রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ হয়েছে। জোড়়া দলিলের উপরে বিতর্ক শুরু হতেই আজ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়়ু, বিহার, হিমাচল প্রদেশ বা পঞ্জাবের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলেছেন কারাটের দরজা বন্ধ করে চলার নীতি নিয়ে। আবার দিল্লি, হরিয়ানা, তেলঙ্গানার লোকজন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়়াইয়ে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলা এবং কেরলের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিবির বরাবরই যথাক্রমে সীতারাম ইয়েচুরি ও কারাটের পক্ষে। হায়দরাবাদেও তা-ই।
কিন্তু এই চেনা বিতর্কের বাইরেও বড়় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক আসলে কে? কারাটই কি ‘সুপার সেক্রেটারি’?
পঞ্জাবের রাজ্য সম্পাদক সুখবিন্দর সিংহ সেখু যেমন অধিবেশন কক্ষে প্রশ্ন তুলেছেন, পার্টি কংগ্রেস থেকেই এক জনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হল। অথচ তিন বছর ধরে তাঁকে বসিয়ে সব কাজ করে গেলেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক! দলের ‘সরকারি’ দলিলও পার্টি কংগ্রেসে পেশ করলেন প্রাক্তন। কেন এমন হবে? মহারাষ্ট্রের উদয় নারভেলকর বলেছেন, সিপিআই(এম) ভেঙে কি আর একটা সিপিএম(আই) তৈরি হবে? তামিলনাড়ুর অরুমুগা নায়নার, বিহারের বিজেন্দর কুমার, পার্টি কেন্দ্রের প্রবীর পুরকায়স্থেরা দাবি করেছেন, গোপন ব্যালটে প্রতিনিধিদের ভোট নেওয়া হোক রাজনৈতিক প্রস্তাবের উপরে।
প্রকাশ্যে ইয়েচুরি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন এই বলে যে, অতীতে বি টি রণদিভে বা হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ সম্পাদক না থাকার সময়েও রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করেছেন। কিন্তু তিনি বললেও দুটো দলিলের নজির খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! বিতর্ক যেখানে দাঁড়়িয়ে, তাতে কাল, শুক্রবার রাতে পার্টি কংগ্রেসে ভোটই হয়তো ভবিতব্য। সিপিএমের প্রথা অনুযায়ী, প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক মত যাচাই করা হয় হাত তুলে। আর কমিটি গঠনে ভোট হলে গোপন ব্যালট। সম্প্রতি কলকাতা জেলা সম্মেলনে যা হয়েছে। কিন্তু এ বার কারাটদের আধিপত্যে চিড়় ধরানোর জন্য রাজনৈতিক প্রস্তাবেও গোপন ব্যালটে ভোটের দাবি উঠছে। যা শুনে ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘আমি এই নিয়ে ১২টা পার্টি কংগ্রেস করছি। কখনও রাজনৈতিক প্রস্তাবে গোপন ব্যালট দেখিনি। তবে চূড়়ান্ত সিদ্ধান্ত স্টিয়ারিং কমিটির।’’ প্রসঙ্গত, পার্টি কংগ্রেসে স্টিয়ারিং কমিটির কাজ করে পলিটব্যুরোই।
‘সরকারি’ খসড়়ার উপরে গোটা দেশ থেকে এসেছিল প্রায় আট হাজার সংশোধনী! তার চাপেই ইয়েচুরির বিকল্প দলিল কেন্দ্রীয় কমিটিতে খারিজ হওয়ার পরেও পার্টি কংগ্রেসে পেশ করতে দেওয়া হয়েছে। প্রাক্-কংগ্রেস সংশোধনীর পাহাড়় থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ২৮৬টা। এ বার পার্টি কংগ্রেসের মধ্যে থেকে আসা সংশোধনীর উপরে স্টিয়ারিং কমিটির রায় কোনও প্রতিনিধি চ্যালেঞ্জ করলেই কাল ভোট!