তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘিরে অচল সংসদ।
গত দু’দিনের মতো বুধবারও বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে অচল হল সংসদের দুই কক্ষ। ফলে নিস্ফলা বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম তিন দিনই। দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতুবি করা হল চলতি সপ্তাহের জন্য। সোমবার ফের বসবে লোকসভা ও রাজ্যসভা।
অন্য সব কিছু স্থগিত রেখে সবার আগে সংসদে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আপৎকালীন আলোচনার দাবিতে অনড় কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল। তার সঙ্গে আবার আজ যুক্ত হয়েছে কৃষক আন্দোলন নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি। এ বিষয়ে সংসদীয় আইনে দু’কক্ষেই নোটিস দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে সাড়া না-পাওয়ায় ওয়েলে নেমে হৈ চৈ এবং স্লোগান অব্যাহত রাখেন বিরোধী নেতারা।
এই সমস্ত বিষয়ে সংসদের ভিতরে বলতে না-পেরে আজ নিজেদের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ যাঁরা মঞ্চে বসে বিজেপি সরকারকে তোপ দেগেছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর (জি-২৩ নামে পরিচিত) অন্যতম সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ আনন্দ শর্মা। গতকালও তাঁকে দেখা গিয়েছে পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব হতে। আজ তিনি বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ আলোচনা, বিতর্ক এবং বিরোধ নিয়ে খোলাখুলি মতের আদানপ্রদান কংগ্রেসের ঐতিহ্যেই রয়েছে। দলে দু’টি গোষ্ঠী নেই। সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে বিজেপিকে উৎখাতের জন্য একজোট হয়ে লড়ব।’’ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের কথায়, ‘‘বাড়তি কর চাপিয়ে মোদী সরকার গত সাত বছরে যে ২১ লক্ষ কোটি টাকা রাজকোষে তুলেছে, তা কোন জনকল্যাণ মূলক খাতে খরচ করা হয়েছে, সেই প্রশ্ন সংসদে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিন দিন চেষ্টা করা সত্ত্বেও আলোচনা করতে দেওয়া হল না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ভারতের ইতিহাসে পেট্রল ডিজেল রান্নার গ্যাস, কেরোসিন কখনও এত দামি হয়নি। ইউপিএ জমানায় বিশ্ব বাজারে প্রতি ব্যারেল অশোধিত তেলের দাম উঠেছিল ১০৯ ডলার। কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা মাখায় রেখে তখন আমরা পেট্রলের দর ৭০ টাকার মধ্যে রেখেছি।’’
খড়্গের মতে, মোদী বিজ্ঞাপন ও প্রচারে ব্যস্ত। কিন্তু দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের পেটে টান পড়ছে। আর কিছু কর্পোরেটকে খুশি রাখা হচ্ছে। শর্মার অভিযোগ, ‘‘এই সরকার মুনাফাখোর। কর বসিয়ে পেট্রোপণ্য থেকে টাকা তুলছে। কিন্তু তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করতে দিচ্ছে না। সংসদ শুধু সরকারের বিল পাশ করানোর জন্য নয়। বিরোধীদের স্বর এবং পরিসর কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’
কৃষক আন্দোলনের বিষয়ে সরব হয়েছেন হরিয়ানার রাজ্যসভা সাংসদ দীপেন্দ্র সিংহ হুডা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘১০৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নীচে বসে আন্দোলন করছেন চাষিরা। প্রায় তিনশো জন মারা গিয়েছেন। অথচ সরকারের তরফ থেকে একটি সহানুভূতির কথাও শোনা যায়নি। এঁরা কী ভারতীয় নন?’’