প্রতীকী ছবি।
১০০ টাকা কেজি দরের মুগ ডালের দাম বেড়ে অন্তত ১৫০ টাকা না-হলে কেন্দ্রীয় সরকার আর মাথা ঘামাবে না। পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা কেজি থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ৮০ টাকা হলে তবেই সরকার নাক গলাবে।
চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্র দিতে অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন বিলও সংসদে পাশ হয়ে গেল। লোকসভায় আগেই হয়ে গিয়েছিল। আজ বিরোধীরা রাজ্যসভার অধিবেশন বয়কট করার পরে বিনা বাধায় মোদী সরকার এই বিল পাশ করিয়ে নিল। এ বার থেকে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া খাদ্যশস্য মজুতে কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না। আনাজের মতো পচনশীল খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হলে তবেই তা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বলে ধরা হবে। অর্থাৎ চাল-ডাল-গমের ক্ষেত্রে দেড় গুণ দাম বাড়লে তবে সরকার হস্তক্ষেপ করবে। কালোবাজারি, মজুতদারি রুখতে ১৯৫৫ সালে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন চালু হলেও এখন তাতে সংশোধন দরকার— এই যুক্তি দিয়ে সংসদে খাদ্য ও গণবণ্টন প্রতিমন্ত্রী দানভে দাদারাও বলেন, ‘‘এতে চাষিদেরও লাভ, ক্রেতাদেরও লাভ।’’
লকডাউনের মধ্যেই মোদী সরকার কৃষি ক্ষেত্রের তিনটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে নিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল, আনাজ কিনে নিতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে চাষিরা যাতে ঠিকমতো ফসলের দাম পান, তার জন্য কৃষি পণ্য ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন ও কৃষকদের চুক্তি চাষে সুরক্ষা ও ফসলের মূল্য নিশ্চিতকরণ বিল আগেই সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছে। এই দু’টি বিল নিয়েই বিরোধীদের আপত্তি না-শোনায় রবিবার রাজ্যসভায় তুলকালাম হয়। আজ অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন বিল পাশ হওয়ায় কৃষি সংস্কারের তিন অধ্যাদেশকেই পাকা আইনের চেহারা দিতে আর বাধা থাকল না।
অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধনী বিল
• চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুতের ছাড়পত্র ও অত্যাবশ্যক পণ্যের আওতা থেকে বাদ
• যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া মজুতে সরকারি বিধিনিষেধ নয়
• পচনশীল খাদ্যদ্রব্যের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ হলে তবেই অস্বাভাবিক বলে ধরা হবে, পচনশীল না হলে দেড়গুণ
• গত ১২ মাসের গড় বাজারদর ও গত পাঁচ বছরের গড় বাজারদরের মধ্যে যেটি কম, তাকে স্বাভাবিক দাম ধরা হবে
• ব্রিটিশ জমানায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম কালোবাজারি ও মজুতদারি রুখতে আইন জারি হয়, পরে তা উঠে যায়
• স্বাধীনতার পরে কালোবাজারি, বেআইনি মজুতদারি রুখতে ১৯৫৫-সালে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন জারি হয়
• ২০১৯, ২০২০-তেও আইনের প্রয়োগ হয়েছে
• ২০১৯-এ পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজের খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মজুতে ঊর্ধ্বসীমা জারি হয়
• আইনে যে কোনও পণ্যকে অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার তার মজুতে ঊর্ধ্বসীমা জারি করতে পারে, ওই পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বণ্টনে নিয়ন্ত্রণ জারি করতে পারে
মোদী সরকারের যুক্তি— চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের মতো খাদ্যশস্য বা আনাজের মজুতে ঊর্ধ্বসীমা থাকায় কৃষি পণ্যের ব্যবসা করা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলির কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল। এখন মজুতে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় বেসরকারি সংস্থাগুলি হিমঘর, গুদাম তৈরি করবে। রিলায়্যান্স রিটেল, আদানি উইলমার, আইটিসি-র মতো সংস্থাগুলি কৃষিতে লগ্নি করবে। চাষিদের মান্ডিতেই ফসল বেচার বাধ্যবাধকতা উঠে যাওয়ায় রিলায়্যান্স-আদানিরা সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কিনবে।
আরও পড়ুন: সংসদের পরে আন্দোলন রাজ্যে, অনড় সরকার পক্ষ, বয়কটে বিরোধীরা
অম্বানী-আদানিদের সুবিধা করে দিতেই মোদী সরকার লকডাউনের মধ্যেই কৃষি ক্ষেত্রে তিন অধ্যাদেশ জারি করেছিল বলে বিরোধী শিবির ও কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ। মঙ্গলবারও পঞ্জাব-হরিনায়ায় কৃষকদের বিক্ষোভ অব্যাহত থেকেছে। বিরোধীদের দাবি, বেসরকারি সংস্থা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র থেকে কম দরে ফসল কিনতে পারবে না বলে সরকার শর্ত বেঁধে দিক। বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করতে ও কৃষকদের খুশি করতে কেন্দ্র সোমবারই তড়িঘড়ি রবি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে দিয়েছিল। কিন্তু চাষিরা তাতে খুশি নন বলে জানিয়েছেন। বিরোধীরা কৃষি বিল নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে বোঝাতে কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞাপন দিয়েও প্রচারে নেমেছে।
আরও পড়ুন: লাদাখ বৈঠকে স্থিতাবস্থার সুর, হারানো জমি নিয়ে চুপ সেনা
কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৩-য় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদী মনমোহন সরকারকে বলতেন, বিজ্ঞাপন না দিয়ে সে টাকা চাষিদের দিতে। এখন নিজে কী করছেন? কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘গমের এমএসপি মাত্র ২.৬% বেড়েছে। ২০১০-১১-এর পরে এমএসপি এত কম হারে বাড়েনি। কেন্দ্র চাষে খরচের দেড়গুণ এমএসপি দিচ্ছে বলে দাবি করলেও স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে চাষের পুরো খরচ হিসেবই করা হচ্ছে না।’’ সিপিএমের কিসান সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘সরকার তো খাদ্য নিগমের মাধ্যমে এমএসপি-তে ফসল কেনাই কমিয়ে দিয়েছে।’’