হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের উপরে পরিষেবা কর বেড়েছে। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিতে দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে সংসদের খাবারে ভর্তুকির বহর নিয়ে বিতর্ক। কেন্দ্র আপাতত নিজের ঘাড়ে দায় না রেখে সাংসদদেরই বিষয়টি বিবেচনা করতে বলছে।
জুলাই মাসের ২১ তারিখ থেকে শুরু হবে সংসদের বর্ষা অধিবেশন। সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু আজ বললেন, ‘‘লোকসভা ও রাজ্যসভার নিজস্ব হাউস কমিটি রয়েছে। খাবারে ভর্তুকির বিষয়ে সাংসদরা সেখানে বিবেচনা করতে পারেন। বিতর্ক হোক। তাতে সদর্থক কিছু বেরিয়ে আসবে।’’
সংসদের ক্যান্টিনে খাবারের দামে কত ভর্তুকি দেয় সরকার, তথ্যের অধিকার আইনে মামলা করে জানতে চেয়েছিলেন সামাজিক আন্দোলনকারী সুভাষ অগ্রবাল। গত কাল জানা গিয়েছে, এক প্লেট পুরি-তরকারির দামে ৮৮ শতাংশ ভর্তুকি দেয় কেন্দ্র। শুধু রুটি আর একটি মিষ্টি বিক্রি হয় বাজার দরে। বাকি সব কিছুই ভর্তুকিতে দেওয়া হয়। তার পরই প্রশ্ন ওঠে, যে সাংসদরা মাসে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বেতন পান, তাঁরা কেন বছরের পর বছর এই বিপুল ভর্তুকিতে খাবার খেয়ে যাবেন?
বেঙ্কাইয়ার প্রতিমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি কিছুটা সামাল দেওয়ার ভঙ্গিতে এ দিন বলেছেন, দেশে সাংসদ রয়েছেন ৮০০ জন। তার মধ্যে অনেকে সংসদের খাবার খান না। অথচ ক্যান্টিনের হিসেব বলছে, সংসদের অধিবেশন চলার সময় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার
ব্যক্তি ওই ক্যান্টিনে খাবার খান। তার মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই সাংসদ ছাড়াও সাংবাদিক, আমলা, নিরাপত্তা কর্মী, সংসদের কর্মী, অতিথি— সকলেই রয়েছেন। অতএব রুডির বক্তব্য, সংসদ ক্যান্টিনে ভর্তুকির সুবিধা একা সাংসদরা ভোগ করেন না। ফলে শুধু সাংসদদের বদনাম করা ঠিক নয়। ‘‘তবে আমরাও এই ভর্তুকির বিরোধিতা করি’’, বলেছেন তিনি।
বস্তুত এই নিয়ে বিতর্ক মাথা চাড়া দেওয়ায় প্রায় সব দলের সাংসদরাই এখন দাম বাড়ানোর সপক্ষে কথা বলছেন। ইউপিএ এর আগে টানা দশ বছর ক্ষমতায় থেকে দাম বাড়ানো নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। অথচ তাদের নেতারাও আজ বলছেন, দাম বাড়ানো উচিত। একই মত বাম-তৃণমূল সাংসদদেরও। সংসদীয় মন্ত্রকের মতে, এমন নয় সংসদের খাবারের দাম আবহমান কাল
ধরে একই রয়েছে। সাংসদদের নিয়ে তৈরি কমিটি বারবারই পর্যালোচনা করে দাম বাড়িয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, সেটাও বাজার দরের থেকে অনেক কম। বাজপেয়ী জমানাতে এক বার এই নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি থিতিয়ে যায়। ইউপিএ আমলে ২০০৫ সালে তেলুগু দেশমের নেতা কে ইয়ারানাইডুর নেতৃত্বে সার্বিক ভাবে সংসদের খাবারের বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তখন বেশ কিছু সাংসদের তরফ থেকেই দাম বাড়ানো নিয়ে আপত্তি আসে। ২০১০ সালে আবার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ হয়। অল্প কিছু দাম বাড়েও। তার পর থেকে আর দাম বেড়েছে বলে জানা যায়নি। মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, এ বারে ফের বিষয়টি নাড়াচাড়া হওয়ায় ভর্তুকি হ্রাস নিয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হতেও পারে।
বেঙ্কাইয়া বলছেন, ‘‘মন্ত্রী হিসেবে আমি একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। হাউস কমিটিতে সাংসদরা মিলেই সিদ্ধান্ত নিন।’’
এখন প্রশ্ন হল, অন্য অনেক বিষয়ে সরকার হাউস কমিটির উপরে চাপ সৃষ্টি করে থাকে। এই ব্যাপারে করবে কি?