আফগানিস্তানে তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পর, এ বার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টায় ইসলামাবাদ। গতকাল সাংবাদিক বৈঠক করে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মৈদ ইউসুফ, ভারত-বিরোধী ১৩১ পাতার নথি (ডসিয়ে) প্রকাশ করার পর এমনটাই মনে করছে নয়াদিল্লি।
সাধারণভাবে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে সব অভিযোগ থাকে পাকিস্তানের, সে সব তো রয়েছেই ওই নথিতে। তবে বিদেশ মন্ত্রকের মতে, সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, ভারত এবং ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ (আইএসআইএস বা আইএস) সংযোগের অভিযোগটি। পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারতের পাঁচটি জায়গায় আইএস প্রশিক্ষণ দেয় এবং ভারত বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ভবিষ্যতেও এমন মিথ্যা অভিযোগ পাকিস্তান প্রমাণ করতে পারবে না। তা সত্ত্বেও, ভারত যখন কাবুলে হক্কানি নেটওয়ার্কের বিষয়ে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু করেছে, কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আইএস-এর একটি শাখা, ঠিক তখনই পরিকল্পনামাফিক এই বিশেষ জঙ্গি সংযোগের অভিযোগ করা হল। আমেরিকা এই সংগঠনের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, রাশিয়ারও প্রবল শত্রু এই জঙ্গি সংগঠনটি। ফলে ভারতের সঙ্গে তাদের নাম জড়িয়ে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কে অনাস্থা তৈরি করা ইসলামাবাদের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। সেখানে দু’পক্ষের প্রবল বাগযুদ্ধের সম্ভাবনা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, রাষ্ট্রপুঞ্জে আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত দেশগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য সরব হতে পারে পাকিস্তান। তাতে যোগ দিতে পারে চিন, রাশিয়া-সহ বেশ কিছু দেশ। তার আগে ভারতকে বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় এই নথি প্রকাশ। নথিটি পাকিস্তান বিভিন্ন দেশকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রক মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত মাসে বালুচিস্তানের গ্বদর শহরের বিস্ফোরণে ৬ জন চিনা নাগরিকের মৃত্যুর পর, ভারতের ঘাড়ে তার দায় চাপিয়েছিল পাকিস্তান। একই ভাবে জুলাইয়ে পাকিস্তানের দাসু বাঁধে বিস্ফোরণের ঘটনাতেও নয়াদিল্লিকে দোষারোপ করা হয়। সেই ঘটনাতেও ৯ জন চিনা নাগরিক নিহত হন। কোনও ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলেও চিনের কাছে বার্তা যায়, ভারতই রয়েছে হামলায়। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিনের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে দেওয়া পাকিস্তানের লক্ষ্য। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে যাতে ভারত-বিরোধী হাওয়া তুলতে বেজিংও সক্রিয় হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় ইসলামাবাদ। নয়াদিল্লির মতে, তালিবানের সঙ্গে পাকিস্তানের মদতেপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের সংযোগের দিক থেকে নজর ঘোরানো এবং ভারতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য আগামী দিনে আরও মরিয়া হবে পাকিস্তান তথা আইএসআই।