প্রতীকী ছবি।
আলোচনার মাধ্যমেই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সব বিবাদের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির বার্তা দিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। পাকিস্তানের চলতি রাজনৈতিক ডামাডোল এবং ইমরান খানের সরকারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনার মধ্যেই রাজধানী ইসলামাবাদে চলা দু’দিনের ‘ইসলামাবাদ নিরাপত্তা সংলাপ’-এর শেষ দিনে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে সমস্ত বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথে মিটিয়ে নেওয়া উচিত। কাশ্মীর-সহ সব সমস্যা সমাধানের জন্য কূটনৈতিক আলোচনাতেই বিশ্বাসী ইসলামাবাদ।’’
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার সরকার গড়ার পরে গোড়ার দিকে দু’দেশের সম্পর্ক নরমে-গরমে চললেও ২০১৯-এ জম্মু-কাশ্মীর থেকে ভারত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টাল খায়। সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের দীর্ঘ টানাপড়েনের পাশাপাশি দু’বছর ধরে চিনের সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ চলছে। নিরাপত্তা সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলার পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলে জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘‘উপসাগরীয় অঞ্চল-সহ বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে কোথাও না কোথাও, কোনও না কোনও সংঘাত এবং যুদ্ধ চলছে। এই কারণে, আমাদের অঞ্চল থেকে এই আগুনের শিখা দূরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘পাকিস্তান কাশ্মীর বিরোধ-সহ সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা ও কূটনীতিতে বিশ্বাস করে এবং ভারত যদি তা করতে রাজি হয়, তবে আমরা এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।’’
পাক সেনাপ্রধানের এই মন্তব্যে এমনিতে অস্বাভাবিক কিছু না থাকলেও কূটনৈতিক মহল বাজওয়ার এই আলোচনার বার্তা দেওয়ার পিছনে অন্য কারণও দেখছে। পাকিস্তান ছাড়াও সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিনের দ্বন্দ্ব চলছে গত দু’বছর ধরে। চিন ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। এই অবস্থায় দিল্লির উপর পরোক্ষে চাপ বাড়াতে এ দিন ভারত-চিন সীমান্ত বিরোধের বিষয়টিও ফের একবার সুকৌশলে উস্কে দিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান। ইসলাবামাবাদের অনুষ্ঠানে পাক সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘কাশ্মীর বিরোধ ছাড়াও ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। পাকিস্তানের জন্য এটিও গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা চাই, আলোচনার মাধ্যমে এবং কূটনৈতিক পথে এই বিরোধেরও দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।’’ কূটনীতিকেরা বলছেন, ভারত-চিন-পাকিস্তান— এই তিন দেশীয় অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে পরোক্ষে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তান। তাৎপর্যপূণ হল, সে রকম কোনও আলোচনায় ভারত বসলে চিন ও পাকিস্তান নিশ্চিত ভাবে পরস্পরের সমর্থন পেয়ে অনেক বেশি চাপে রাখতে পারবে দিল্লিকে। সে কারণে পাক সেনাপ্রধানের শান্তি আলোচনার মন্তব্য নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি নন কূটনীতিকদের একাংশ।
ইসলামাবাদের সম্মেলনের শেষ দিনে কিছুটা রাষ্ট্রনায়কের ঢংয়ে জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক নেতাদের তাঁদের আবেগ এবং পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে ইতিহাসের শিকল ভেঙে এই অঞ্চলের প্রায় তিনশো কোটি মানুষের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনার সময় এসেছে।’’ নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের অনড় আচরণ একটি বাধা বলেও মনে করেন পাক সেনাপ্রধান।