(বাঁ দিকে) অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং (ডান দিকে) প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরে শান্তি ফিরে এসেছে বলে দাবি করেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। আজ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম জবাবে বলেন, ‘‘অসমের মুখ্যমন্ত্রী মণিপুরে নাক না গলালেই ভাল। বীরেন সিংহ ইস্তফা দিলে এবং ওই রাজ্যে কয়েক মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলেও ভাল হবে।’’
তবে অশান্তি ও হত্যার পটভূমিতেই খানিক শান্তির বার্তা পেল রবিবারের মণিপুর। শনিবার রাত থেকে ফের অশান্ত রাজ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কুকিদের দুটি সংগঠন বিকেলে ঘোষণা করল, তারা কেন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে এত দিন ধরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে চলতে থাকা অবরোধ আজ থেকে তুলে নিচ্ছে।
জনজাতি যৌথ মঞ্চ দাবি করে, শনিবার গভীর রাতে চূড়াচাঁদপুর জেলার মার ও কমদের গ্রাম লাংজা ও চিংগানমেইতে আক্রমণ করা হয়েছিল। ২৬টি বাড়ি ও তিনটি গির্জা পোড়ানো হয়। অনেকে পালাতে পারলেও ৬ গ্রামরক্ষীকে অপরহরণ করে মেইতেইরা। তাঁদের মধ্যে লাংজা গ্রামে পাহারাদার দলের সদস্য ফুটবলার ডেভিড মার থিয়েকের মাথা গ্রামের বাইরে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায় মেইতেইরা। এ দিকে কুকিদের তরফে বিষ্ণুপুরে মেইতেইদের খৈজুমানতাবি গ্রামে আক্রমণ করা হয়। তিন মেইতেই নিহত হন। ২ জন জখম হন। মেইতেইদের দেহ প্রথমে কুম্বির বিধায়ক সানাসাম প্রেমচন্দের বাড়ি নিয়ে আসেন মহিলারা। সেখান থেকে দেহগুলি ইম্ফলে আনা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। আজ বিষ্ণুপুরে যান মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ। তিনি সেখানে উপস্থিত থাকার সময়েই গুলিচালনার ঘটনা ঘটে।
এ দিকে রবিবার বিকেলে কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজ়েশন ও ইউনাইটেড পিপলস্ ফ্রন্ট কাংপোকপিতে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে চলতে থাকা অবরোধ তুলে নেয়। তারা বিবৃতিতে জানায়, সকলের সঙ্গে কথা বলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে ভরসা রেখে ও কেন্দ্রের অনুরোধে সাড়া দিয়ে, মানুষের কষ্ট লাঘবকরতে তারা এত দিন ধরে চালানো অবরোধ প্রত্যাহার করছে। সংগঠনের তরফে কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যেন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাহাড়ের সব এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ও টহলদারি শুরু করে। তেমন হলেই তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা সরে যাবেন। সংগঠনের তরফে মণিপুরের সংগঠনগুলির কাছেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি ফেরানোর জন্য একই পথে হাঁটার আবেদন রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি বীরেনের পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দুই বড় দাবিদার মন্ত্রী ওয়াই ক্ষেমচাঁদ ও টি বিশ্বজিৎকে দিল্লি তলব করেছে বিজেপি হাইকমান্ড। তাই রাজ্যে নেতৃত্ব বদলের সম্ভাবনা আবার দেখা দিচ্ছে। আগের বার দিল্লির কড়া বার্তার পরেও বীরেন পদত্যাগ করেননি। বীরেনের বক্তব্য, “পদত্যাগ করতে বেরোনোর পরে যে ভাবে জনতা আমার পথ আটকে আমার প্রতি আস্থা ও ভালবাসা দেখিয়েছে তাতে আমি গর্বিত। জনতার আমার পাশে আছে। জনতা বললে তবেই পদত্যাগ করব।”
মন্ত্রী এল সুশীন্দ্র রাজ্যের হিংসার দায় কংগ্রেসের উপরে ঠেলে দাবি করেন, “মণিপুর শান্ত হয়ে এসেছিল। কিন্তু রাহুল গান্ধীর সফরের পরেই মণিপুরে ফের অশান্তি বাড়ছে। কংগ্রেস-সহ একাংশ বিরোধী হিংসার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। রাহুল গান্ধীর প্ররোচনায় হওয়া হিংসার ফলেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন।”