লকডাউনে এই ছবিই দেখা গিয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে। —ফাইল চিত্র
করোনাকালে আরও গভীর হয়েছে এ দেশের ধনসম্পদ বণ্টনের বৈষম্য। ভারতের মুষ্টিমেয় ধনকুবের এবং কোটি কোটি অদক্ষ শ্রমিকের আয়ের ফারাকটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অতিমারি পরিস্থিতি। বিশ্ব অর্থনৈতিক মঞ্চ(ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম)-এর বৈঠকের আগে একটি সমীক্ষায় এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অক্সফ্যাম। ২৬ জানুয়ারি থেকে সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে শুরু হওয়া বৈঠকে পেশ হবে সেই রিপোর্ট।
অক্সফ্যামের ওই রিপোর্টের শিরোনাম ‘দ্য ইনইক্যুয়ালিটি ভাইরাস’ অর্থাৎ ‘বৈষম্যের ভাইরাস’। কী বলা হয়েছে অক্সফ্যামের ওই রিপোর্টে?
• লকডাউনের সময় দেশের ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে গড়ে ৩৫ শতাংশ।
• উল্টো দিকে ৮৪ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে বিভিন্ন ভাবে। গত বছর এপ্রিলেই প্রতি ঘণ্টায় কাজ হারিয়েছেন ১.৭ লক্ষ মানুষ।
• রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত বছর মার্চ (যে সময় থেকে লকডাউন কার্যকর হয়)মাস থেকে ভারতের ১০০ ধনকুবেরদের যে পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে তাতে তাঁরা দেশের ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ দরিদ্রতম মানুষকে ৯৪ হাজার ৪৫ টাকা করে দান করতে পারতেন।
• রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতের বাড়তে থাকা আর্থিক বৈষম্য মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। অতিমারির সময়ে রিলায়্যান্স কর্ণধার মুকেশ অম্বানীর ঘণ্টা পিছু যা আয় তা রোজগার করতে এক জন অদক্ষ শ্রমিকের ১০ হাজার বছর লাগবে’। প্রসঙ্গত, গত বছর অগস্টেই বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসেন রিলায়্যান্স কর্ণধার।
• রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দেশের শীর্ষস্থানে থাকা ১১ জন ধনকুবেরের যে পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে তার অনুপাতে ১ শতাংশ কর বাড়ানো হলে জন ওষধি প্রকল্পের চেহারাটাই বদলে যেত।
• শারীরিক দূরত্ব বজায়, সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার মতো কোভিড বিধি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ওই রিপোর্ট। বলা হয়েছে, শহর এলাকায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধি মেনে চলা ৩২ শতাংশ মানুষের কাছে বিলাসিতা মাত্র। কারণ তাঁরা বেশির ভাগই এক অথবা দুই কামরার বাড়িতে বসবাস করেন। ৩০ শতাংশ মানুষের কাছে হাত ধোওয়ার জন্য সাবান জল জোগাড় করা কঠিন বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই রিপোর্টে।
• ভারত সরকারকে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে অক্সফ্যাম। সেই সঙ্গে তা ভবিষ্যতে নিয়মমাফিক বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
ভারতের পাশাপাশি কোভিড কালে দুনিয়ার আর্থিক বৈষম্যের কথাও তুলে ধরেছে অক্সফ্যাম। গত বছর ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ধনকুবেরদের আর্থিক উন্নতি ‘বিস্ময়কর’ বলে আখ্যা দিয়েছে ওই রিপোর্ট। কোভিড সঙ্কট শুরুর মুহূর্ত থেকে বিশ্বের প্রথম ১০ ধনীর সম্পদও বাড়তে শুরু করেছে বলেও জানিয়েছে অক্সফ্যাম।