অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ছবি: পিটিআই।
দিল্লির তুঘলকাবাদের একটি গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড় করানো ট্যাঙ্কার থেকে গ্যাস লিক করে অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনশোরও বেশি ছাত্রী।
শনিবার সকাল ৭টা। সবে তখন স্কুল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিছু ক্ষণ পড়েই স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসরুম থেকে ছাত্রীদের অসুস্থতার কথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা স্কুলে। চোখ, গলা জ্বালা, দমবন্ধ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের মধ্যে। ঝাঁঝালো গন্ধ তখন স্কুলের ভিতরে ভরে গিয়েছে। একের পর এক ছাত্রী অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে। প্রথম দিকে ৫০-৬০ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লেও যত সময় গড়িয়েছে সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
আরও পড়ুন: অভব্য আচরণে নাম ‘নো ফ্লাই’ তালিকায়!
দক্ষিণ দিল্লির তুঘলকাবাদ এলাকার প্রহ্লাদপুরে রানি ঝাঁসি স্কুলের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলের সামনে একটি গ্যাসভর্তি ট্যাঙ্কার দাঁড় করানো ছিল। সেই ট্যাঙ্কার থেকে গ্যাস লিক করে স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে তখন এক এক করে ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্কুলের অন্যান্য পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্সকে খবর পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে আসে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পুরো স্কুল ও তার আশপাশের এলাকা খালি করে দেয় পুলিশ। অসুস্থ ছাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খবর পেয়েই স্কুলে ছুটে আসেন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানান, অসুস্থ ছাত্রীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে বিপদ কেটে গিয়েছে। অসুস্থ পড়ুয়াদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ১০-১৪ বছর।
এই স্কুলের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাঙ্কার থেকে গ্যাস লিক করে।
ঘটনার পরই দিল্লি উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি হাসপাতালের চিকিত্সকদের সঙ্গে কথা বলেছেন যাতে পড়ুয়াদের চিকিত্সায় কোনও রকম খামতি না থাকে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা কেন্দ্র পরিচালিত হাসপাতালগুলিকে অসুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, এইমস-এর কয়েক জন চিকিত্সকদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাঙ্কারে যে রাসায়নিক ছিল সেটা চিন থেকে আনা হয়েছে। ট্যাঙ্কারটি যাওয়ার কথা ছিল হরিয়ানার সোনপতে। সব মিলিয়ে ৩১০ জন ছাত্রী শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এই ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেছেন।
ঘটনাস্থলে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
এ দিকে এই ঘটনার জন্য দিল্লি সরকারকে দায়ী করে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন দিল্লির বিরোধী দলের নেতা বিজেন্দ্র গুপ্ত। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ দায়ী। স্কুল খোলার সময়ই গ্যাস লিক হওয়ার সঙ্কেত মিলেছিল। কিন্তু তার পরেও কেন বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হল, কেন সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সকিয়ে দেওয়া হল না, প্রশ্ন তোলেন বিজেন্দ্র।
ছবি: পিটিআই এবং এএফপি।