মনমোহন সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
নরেন্দ্র মোদী তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহকে ‘মৌনমোহন’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। মণিপুরের হিংসা নিয়ে সংসদে নীরবতা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন প্রশ্নের মুখে, তখন কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা মোদীর সামনে মনমোহন সিংহের দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন।
গত চার দিন ধরে বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও মণিপুরের হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে মুখ খুলতে রাজি হননি। কংগ্রেস আজ মনে করিয়েছে, ২০১২ সালে অসমে অশান্তির জেরে মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তা নিয়ে সংসদে আলোচনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজে থেকে মুখ খুলেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সে সময় মনমোহন সরকারের প্রবল সমালোচক আম আদমি পার্টিও আজ রাজ্যসভায় এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে। আম আদমি পার্টির বক্তব্য, বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় এখন মুলতুবি প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন না। কিন্তু সে সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্যা নিয়ে আলোচনায় তৎকালীন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি সায় দিয়েছিলেন।
২০১২-তে অসমে বড়ো সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিমদের সংঘর্ষে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারা হাজারে হাজারে নিজেদের রাজ্যে ফিরতে শুরু করেন। তা নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা হয়। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, যে প্রধানমন্ত্রীকে বিজেপি মৌন বলত, সেই মনমোহন সিংহ তাঁর দশ বছরে ৭০ বার সংসদে বলেছিলেন। ২০১২-র ১৭ অগস্ট মনমোহন দক্ষিণ ভারতে বসবাসকারী উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের আতঙ্ককে গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে রাজ্যসভায়, তারপরে লোকসভায় নিজে থেকে মুখ খুলেছিলেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের উপরে আক্রমণের নিন্দা করে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। মনমোহন জানতেন, উত্তর-পূর্বে সমস্যা তৈরি হলে সেটা দেশের নিরাপত্তার জন্য ঠিক নয়। মণীশ বলেন, ‘‘এখন মোদী সরকার মণিপুর নিয়ে আলোচনায় রাজি নয়। প্রশ্ন আলোচনার নয়, প্রশ্ন দায়িত্ব নেওয়ার।’’
এই একই দৃষ্টান্ত তুলে আম আদমি পার্টির রাঘব চাড্ডা আজ মণিপুর নিয়ে আলোচনা চাইলেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনখড় তা খারিজ করে দিয়েছেন। মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবি তোলার সময়েই সোমবার আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহকে সাসপেন্ড করা হয়। চাড্ডা এ দিন তা নিয়ে ভোটাভুটি চাইলেও ধনখড় রাজি হননি। সঞ্জয় এ দিনও সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসেছেন। বিরোধী সাংসদরা পালা করে তাঁর পাশে থেকেছেন। দিল্লি, পঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আম আদমি পার্টির লড়াই হলেও কংগ্রেসের নেতারাও সঞ্জয়ের সঙ্গে ধর্নায় যোগ দিয়েছেন।