National News

বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু সমীকরণে মীরার চেয়ে অনেক এগিয়ে রামনাথ

ইতিমধ্যেই বিপুল সমর্থন জোগাড় হয়ে গিয়েছে। মীরা কুমারের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে দৌড় শুরু করলেন রামনাথ কোবিন্দ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ২০:৪৩
Share:

রাজনৈতিক পরিচিতিতে মীরা কুমার অনেক এগিয়ে ঠিকই। কিন্তু ভোটের অঙ্কে আপাতত তিনি রামনাথ কোবিন্দের চেয়ে যোজন পিছিয়ে। —ফাইল চিত্র।

নির্বাচন ১৭ জুলাই। অর্থাৎ এখনও প্রায় সাড়ে তিন সপ্তাহ দূরে। শুক্রবার সবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দ। বিরোধীদের প্রার্থী মীরা কুমারের মনোনয়নপত্র এখনও জমা পড়েনি। কিন্তু ইতিমধ্যেই জয়ের গন্ধ পেয়ে যাওয়া শাসক শিবির এখন থেকেই চনমনে। এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যখন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে সংসদ ভবনে যাবেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে সঙ্গে থাকবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু মোদী একা নন, এনডিএ বহির্ভূত যে সব দল কোবিন্দকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছে, তাদের অনেককেও মনোনয়ন পর্বে হাজির করে দিলেন মোদী-শাহ জুটি। ফলে ভোটের আগেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেল ভোটের ফল।

Advertisement

রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করছেন কারা?

Advertisement

দেশের শাসক জোট অর্থাৎ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সর্বান্তকরণে রামনাথ কোবিন্দের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত দু’টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কিন্তু এই ছবি ছিল না। ২০০৭ এবং ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কিন্তু বিজেপির সবচেয়ে পুরনো শরিক শিবসেনাই বিজেপির পাশে ছিল না। ওই দুই নির্বাচনে শিবসেনা সমর্থন করেছিল ইউপিএ প্রার্থী প্রতিভা পাটিল এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। সেই ‘চির-অবাধ্য’ শিবসেনাও এ বার বাধ্য শরিক। রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষিত হওয়ার পর বিনা বাক্যব্যয়ে উদ্ধব ঠাকরে জানিয়ে দিয়েছেন, দল কোবিন্দকেই ভোট দেবে। বিজেপির চিন্তা ছিল কাশ্মীরি শরিক পিডিপি-কে নিয়েও। জম্মু-কাশ্মীরে টানা অশান্তির জেরে উপত্যকার আবেগ এখন যে দিকে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কী অবস্থা নেবে, তা নিয়ে বিজেপির কোনও কোনও অংশে সংশয়ে ছিল। কিন্তু মেহবুবা কোনও বাঁকা পথ নেননি। শরিকি সৌজন্য বজায় রেখে তিনিও কোবিন্দের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। অর্থাৎ গোটা এনডিএ ঐক্যবদ্ধ।

সাংসদ এবং বিধায়কদের নিয়ে গঠিত যে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি, সেই ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটমূল্যের ৪৮.৯৩ শতাংশ ভোটই এখন এনডিএ-র হাতে। এনডিএ ঐক্যবদ্ধ থাকায় ওই ভোট রামনাথ কোবিন্দ অবশ্যই পাচ্ছেন।

এনডিএ-তে না থেকেও রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করছেন নীতীশ কুমার। তাঁর দল জেডি(ইউ)-এর হাতে ১.৯১ শতাংশ ভোট রয়েছে। ওড়িশা এবং তেলঙ্গনার শাসক দল বিজেডি এবং টিআরএস-ও সমর্থন করছে কোবিন্দকে। বিজেডির ভোট ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের ২.৯৯ শতাংশ। টিআরএস-এর হাতে রয়েছে ২ শতাংশ।

জয়ললিলতার মৃত্যুর পর তাঁর দল এআইএডিএমকে দু’ভাগে ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থনের প্রশ্নে বিবদমান দুই শিবির একজোট। তাই এআইএডিএমকে-র কাছ থেকেই ৫.৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে যাবেন এনডিএ প্রার্থী। জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসও একই পথে। সেখান থেকে মিলবে আরও ১.৫৩ শতাংশ ভোট।

শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় রামনাথকে ঘিরে বিজেপি নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিই বলে দিয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে কোনও সংশয় নেই তাঁদের মনে। ছবি: পিটিআই

সব মিলিয়ে ৬২.৭৫ শতাংশ ভোট রামনাথ কোবিন্দের পক্ষে পড়া প্রায় নিশ্চিত। জয় নিয়ে যে সংশয় কমই, সে কথা মনোনয়নপত্র জমা করার দিনেই স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী, বিজেপি সভাপতি এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিংহ ভাগ মনোনয়ন জমা পড়ার সময় কোবিন্দের পাশে ছিলেন। ছিলেন একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন টিআরএস প্রধান তথা তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও এবং এআইএডিএমকে নেতা তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামীও।

আরও পড়ুন: মোদী-শাহ জুটির শক্তি প্রদর্শনের মাঝে মনোনয়ন জমা দিলেন রামনাথ

রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষিত হওয়ার পরে মায়াবাতীর বসপা, অখিলেশ-মুলায়মদের সপা, করুণানিধির ডিএমকে-সহ বেশ কয়েকটি দল কিছুটা বেসুরে বাজতে শুরু করেছিল ঠিকই। কোবিন্দকে সমর্থন করা হতে পারে— এমন ইঙ্গিতই দেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোবিন্দের বিরুদ্ধে কংগ্রেস মীরা কুমারকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিতেই সে সমস্যা অতীত। জেডি(ইউ)-কে বিরোধী শিবির থেকে বিজেপি নিজেদের দিকে টানতে পেরেছে ঠিকই। কিন্তু বাকিরা শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ। এতে বিরোধী ঐক্যের প্রবক্তাদের মুখরক্ষা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোবিন্দকে যাঁরা ভোট দেবেন না, তাঁদের সকলকে এক জায়গায় আনতে পারলেও ৩৭.২৫ শতাংশের বেশি ভোট মীরা কুমার পাবেন না। বর্তমান ছবিটা অন্তত তেমনই বলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement