ফাইল চিত্র।
নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় জাতীয় স্তরে এ বার এক মঞ্চে আসছে বিরোধী দলগুলি। সব ঠিকঠাক চললে আগামী ১৩ জানুয়ারি দিল্লিতে বিরোধী নেতৃবৃন্দ এই নিয়ে বৈঠক করবেন। ওই দিন বেলা দু’টোয় সংসদের অ্যানেক্সি ভবনে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন প্রমুখের। আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বাম দলগুলিকেও।
নাগরিকত্ব আইনের প্রশ্নে বিরোধীদের একত্র করার কাজটা শুরু করেছিলেন মমতাই। ওই আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় ওই নীতির বিরোধিতা জানিয়ে পথে নেমেছেন মমতা। গোটা দেশের মধ্যেই মমতাই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি কার্যত কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ও নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কোনওটাই প্রয়োগ হতে দেবেন না। তার পরে একে একে সুর চড়ায় কেরল, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি। ইতিমধ্যে মমতাই বিরোধী দলগুলিকে চিঠি লিখে একত্র হওয়ার আহ্বান জানান। তাতে ঐকমত্য জানান সনিয়া। গত মাসের ২৯ তারিখ ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের শপথ অনুষ্ঠানে একমঞ্চে দাঁড়ান রাহুল গাঁধী-মমতা-স্ট্যালিন-কানিমোঝি-তেজস্বী যাদব-ডি রাজা-সীতারাম ইয়েচুরিরা। সম্প্রতি কেরল সরকার রাজ্য বিধানসভায় সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করেছেন। তার পরে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও অ-বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়ে একযোগে চলার ডাক দিয়েছেন। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, মমতা যে প্রক্রিয়াটি শুরু করেছিলেন, ১৩ তারিখ সেটাই একটা রূপ পেতে চলেছে।
শাসক শিবিরকে প্রতিরোধের বার্তা দিতে খোদ দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর খাসতালুকে বিরোধীদের সার্বিক ঐক্যের ছবিটি তুলে ধরতে চাইছেন মমতা। রাজ্যওয়াড়ি সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী তিনি। তৃণমূল নেত্রী বুঝতে পারছেন, যেহেতু সিএএ একটি কেন্দ্রীয় আইন, সে কারণে সব ক’টি বিজেপি-বিরোধী রাজ্যকে এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই ওই আইনের বিরুদ্ধে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোড়া সম্ভব হবে মোদী-শাহকে। ওই বৈঠকে বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে একটি যৌথ কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের মতে, যে দল যে রাজ্যে শক্তিশালী, সেই দল সেই রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধিতায় নামবে।
গঙ্গাসাগর মেলা থাকায় তড়িঘড়িই দিল্লিতে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, অন্য দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন মমতা। কথা হয়েছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও। উদ্ধব না থাকলেও, শিবসেনার শীর্ষ পর্যায়ের কোনও নেতা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন। এসপি নেতা অখিলেশ যাদব ও বিএসপি নেত্রী মায়াবতী যাতে বৈঠকে উপস্থিত থাকেন, তার জন্যও যোগাযোগ করছেন তৃণমূলের নেতারা। এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। ঝিমিয়ে দেশের অর্থনীতি। কাজ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মোদী সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে কী ভাবে আসন্ন অধিবেশনে সংসদের উভয় কক্ষে যৌথ ভাবে এগোনো যায়, তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা ওই বৈঠকে।