দিল্লির বৈঠকে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে শরদ পওয়ার। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
লোকসভায় বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও রাজ্যসভায় এখনও সংখ্যালঘু। তবু দুই কক্ষেই পাশ হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। সংসদের ভিতরে ঐক্য বজায় রাখতে পারেনি বিরোধীরা। তার পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে গোটা দেশ যখন উত্তাল, তখনও সংসদের বাইরে ঐক্য গড়ে তুলতে পারল না বিরোধীরা। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর ডাকা বৈঠকে গরহাজির থাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরীবাল, এম কে স্ট্যালিন, উদ্ধব ঠাকরে।
বৈঠকে উপস্থিত বাকি কুড়িটি বিরোধী দল আজ স্থির করল, ১৩টি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যকে অবিলম্বে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) প্রক্রিয়া রদ করার জন্য আবেদন জানানো হবে। বিরোধীদের দাবি, এই ১৩ রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, অন্ধ্র, তেলঙ্গানার মতো রাজ্য আছে। বৈঠকে আরও ঠিক হয়েছে, সিএএ প্রত্যাহারের দাবি তোলার পাশাপাশি ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন, ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস ও ৩০ জানুয়ারি গাঁধী-প্রয়াণ দিবসে গোটা দেশে প্রতিবাদে শামিল হবে বিরোধীরা।
সিএএ-র বিরুদ্ধে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক প্রথম দিয়েছিলেন মমতাই। তার পরেও সনিয়ার বৈঠকে তাঁর না-যাওয়ার ঘোষিত কারণ, ভারত বন্ধের দিনে রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের ‘গুন্ডামি’।
আরও পড়ুন: সংসদ হামলাতেও কি জড়িত দেবেন্দ্র
বাকিরা এলেন না কেন? মায়া বলেছেন, রাজস্থানে কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন করার পরেও তারা বিএসপি বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিচ্ছে। বৈঠক বয়কট তারই প্রতিবাদ। কংগ্রেস সূত্রের অবশ্য দাবি, মায়াবতী ইদানীং বিজেপির ইশারায় চলছেন।
অখিলেশ আবার ক্ষুব্ধ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের ঘরে-ঘরে যাওয়ায়। ডিএমকে নেতা টি আর বালু দিল্লিতে এসেও তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস-ডিএমকে বিবাদের জেরে বৈঠকে আসেননি। ভোট সামনে বলে দিল্লিতে ‘প্রতিপক্ষ’ কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে আসতে চাননি কেজরীবাল। আর শিবসেনার সঙ্গে মহারাষ্ট্রে জোট হলেও তারা জাতীয় স্তরে ইউপিএতে এখনও শামিল হয়নি। আহমেদ পটেল যাকে বলছেন, যোগাযোগের ত্রুটি।
বিরোধী দলের বৈঠকে কারা থাকল:
কংগ্রেস, এনসিপি, সিপিএম, জেএমএম, আরজেডি, সিপিআই, লোকতান্ত্রিক জনতা দল, আইইউএমএল, এনসি, আরএসপি, কেসিএম, পিডিপি, এআইইউডিএফ, জেডিএস, আরএলডি, হ্যাম, আরএলএসপি, স্বাভিমান পক্ষ, ফরওয়ার্ড ব্লক, ভিসিকে
গরহাজির দল
তৃণমূল, সপা, বসপা, আপ, ডিএমকে, শিবসেনা
এ দিন সংসদ ভবনের অ্যানেক্সে বৈঠকের পর কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ এবং সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ১৩ জন মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলেছেন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) করবেন না। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ বলেছে এনপিআর করবে না। আজ যাঁরা বৈঠকে থাকেননি, তাঁরাও এই সিদ্ধান্তে শামিল। আজাদের মতে, ‘‘মমতা, মায়াবতী, অখিলেশও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আছেন। বৈঠকে থাকুন বা না-থাকুন।’’
বৈঠকে সনিয়া বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। নিজের কথা নিজেই খণ্ডন করছেন। অথচ নিরন্তর উস্কানি দিচ্ছেন। তাঁরা যা-ই বলুন, এখন এনপিআর করা হচ্ছে গোটা দেশে এনআরসি চালুর লক্ষ্যেই।’’ বিরোধীরা মনে করছে, এনপিআর-এর মাধ্যমে সন্দেহজনক নাগরিকদের চিহ্নিত করে পরে এনআরসি-তে বাদ দেওয়া হবে। গরিব, প্রান্তিক, দলিত, আদিবাসীদের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিশানা করাই সরকারের লক্ষ্য। সনিয়া বলেন, ‘‘যে ভাবে বিরোধী কণ্ঠ দমন করে, ঘৃণা ছড়িয়ে বেনজির অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে, সংবিধানকে খাটো করা হচ্ছে, তাতে সকলকে এখন একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’
কিন্তু কেন্দ্রের আইনের মোকাবিলা কী ভাবে করবে অ-বিজেপি রাজ্যগুলি? এক বিরোধী নেতা বলেন, ‘‘অ-বিজেপি রাজ্য এনপিআর না-করার জন্য তাদের সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশ দিতে পারে। এ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাত তৈরি হলে কেন্দ্র যদি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে তখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাবে। কিন্তু অ-বিজেপি রাজ্যগুলি একযোগে কাজ করবে, সেটিই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।’’
বিষয়টি আঁচ করে তড়িঘড়ি আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে দিয়ে রাতে সাংবাদিক সম্মেলন করায় বিজেপি। রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে পাকিস্তান সবথেকে বেশি খুশি হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাহুল গাঁধীরাই হিংসা উস্কে দিচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করার জন্য তাঁরা যে-কোনও পর্যায়ে যেতে পারেন। ‘শহুরে নকশাল’, ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর পাশে দাঁড়িয়ে যে এনআরসির বিরোধ করছেন, সেটা এখনই আসছে না বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।’’