গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। সোমবার এই অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিলেন জেপিসির সদস্য বিরোধী সাংসদেরা। বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকার ‘স্বেচ্ছাচারী আচরণের’ কারণে তাঁরা জেপিসি থেকে ইস্তফার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, ডিএমকের মহম্মদ আবদুল্লা, ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেসের নাসির হুসেন এবং মহম্মদ জাভেদের মতো বিরোধী সাংসদেরা রবিবার পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘যে কোনও উপায়ে ওয়াকফ বিল পাশের উদ্দেশ্যেই একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন জেপিসির চেয়ারম্যান।’’ পাশাপাশি, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ‘তাড়াহুড়ো’ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে চিঠিতে। আবেদন জানানো হয়েছে, যেন বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন পক্ষের মতামত জানার জন্য আরও সময় দেওয়া হয়।
১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। বিজেপি এবং সরকারের যুক্তি, বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকারে রাশ টানতেই এই পদক্ষেপ। বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে চলতি বিলে ৪৪টি সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে ওয়াকফ আইনের ধারা ৪০ অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার ছিল। ফলে বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মালম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ ওঠে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে। যদিও চিঠিতে বিরোধীদের অভিযোগ, অন্তত ১০০টি সংশোধনী করা হয়েছে নতুন বিলের খসড়ায়। সরকার ৪৪টি সংশোধনীর কথা বলে সত্য আড়াল করতে চাইছে।
নতুন ওয়াকফ বিলের খসড়া নিয়ে গোড়া থেকেই টানাপড়েন শুরু হয়েছে সরকার ও বিরোধীদের। গত ২২ অক্টোবর জেপিসির বৈঠকে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল শ্রীরামপুরের কল্যাণকে। তিনি বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিতণ্ডার সময় জেপিসির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালকে লক্ষ্য করে কাচের বোতল ভেঙে ছোড়েন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় কাচ বিঁধে কল্যাণের হাত জখম হয়েছিল। কল্যাণ গত মঙ্গলবার দাবি করেন, তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে কাচের বোতল ভাঙেননি। সেই সঙ্গে জগদম্বিকাকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি আমাকে অসম্মান করেছেন। আমার পরিবারের উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে।’’
এর পরে ২৮ অক্টোবর জেপিসির দ্বিতীয় বৈঠকে যোগ দেননি কল্যাণ। সে দিন বিরোধী সাংসদেরা ওয়াকফ বিল বাতিলের দাবিতে সাময়িক ভাবে ওয়াকআউট করেছিলেন। ২৯ অক্টোবর তৃতীয় বৈঠকে অবশ্য যোগ দিয়েছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ অগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। বিলটি ‘অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি জেপিসি-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে বিরোধী শিবির এবং মুসলিম সংগঠনগুলির যুক্তি, ওয়াকফ বোর্ডের বিভিন্ন সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। ‘জমিয়তে ইসলামি হিন্দ’ এবং ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডে’র মতো প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, গেরুয়া শিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি পাশ করাতে চাইছে সংশোধনী বিল। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারাই এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন।