গরিব অস্ত্রেই মোদী বধের কৌশল মমতা-রাহুলের

নোট বাতিলের পর এক মাস হয়ে গেল, তবু দুর্ভোগের শেষ নেই মানুষের। উল্টে নোটের চোটে মধ্যবিত্ত-মজুরের হয়রানি এখন হাহাকারে পরিণত হয়েছে। কাজ হারাতে শুরু করেছেন গ্রাম-শহরের মানুষ। ফলে যে নোট-অস্ত্রকে হাতিয়ার করে গরিব-মধ্যবিত্তের মসিহা হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সেই অস্ত্রেই বিঁধতে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৩৫
Share:

সংসদে আক্রমণাত্মক রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

নোট বাতিলের পর এক মাস হয়ে গেল, তবু দুর্ভোগের শেষ নেই মানুষের। উল্টে নোটের চোটে মধ্যবিত্ত-মজুরের হয়রানি এখন হাহাকারে পরিণত হয়েছে। কাজ হারাতে শুরু করেছেন গ্রাম-শহরের মানুষ। ফলে যে নোট-অস্ত্রকে হাতিয়ার করে গরিব-মধ্যবিত্তের মসিহা হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সেই অস্ত্রেই বিঁধতে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গাঁধী।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নোট বাতিলের এক মাস পূর্ণ হলো। দিনটাকে ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালনের ডাক দিয়েছিলেন বিরোধীরা। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে ‘হঠকারিতার এক মাস’ উপহার দেওয়ার জন্য মোদী ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে দাবি করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘মাস কেটে গেলেও নোটের দেখা নেই। ব্যবসাপত্তর লাটে উঠেছে। আমরা দুর্ভিক্ষের দিকে এগোচ্ছি। এর পরেও কি পার পেতে পারেন মোদীবাবু?’’

নোট বাতিলের জেরে আমজনতার যে অসুবিধা হচ্ছে, আগেই তা কবুল করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘নোট বাতিলের দায় বহন করার মতো চওড়া কাঁধ প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে।’’ সেই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘কাঁধ চওড়া বলেই প্রধানমন্ত্রী সব সামলে নিতে পারবেন, এটা কী কথা! কাঁধ তো রাবণেরও চওড়া ছিল! দেশের সব মানুষের কাঁধ নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর কাঁধ চওড়া হয়।’’

Advertisement

হাতে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ সীতারাম, রাহুলদের।

এর কিছু আগেই সংসদ চত্বরে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হন রাহুল। গাঁধী মূর্তির পাদদেশে হাতে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদেরা। রাহুল বলেন, ‘‘কারও সঙ্গে কথা না বলে প্রধানমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যার জেরে গরিবরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।’’ তার পর মমতার সুরেই প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেউ কেউ বলছে, এটা নাকি মোদীর সাহসী সিদ্ধান্ত! কিন্তু সাহসী সিদ্ধান্ত কখনও বোকার মতোও হয়। এটাও তেমন।’’

কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের মন জয়ই যে নোট বাতিলের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, সেটা মোটের উপর স্পষ্ট। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমজনতার আবেগ আঁচ করে তাই গোড়ার ক’দিন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কিছুটা সাবধানী ছিল কংগ্রেস। মমতার অবশ্য বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, এর ফলে ভুগতে হবে সাধারণ মানুষকেই। তাই প্রথম দিন থেকেই নোট বাতিলের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। এখন, এক মাস পর গ্রাম-শহরের মানুষের হাহাকার দেখে কার্যত মমতার পথেই চলছেন রাহুল। দু’জনের রাজনৈতিক তালমিলটাও চোখে পড়ার মতো! দু’জনেই চাইছেন নোট-প্রশ্নে মানুষকে মোদীর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে।

বিরোধীদের এই রণকৌশল ভোঁতা করতে চেষ্টার কসুর করছেন না প্রধানমন্ত্রীও। যাঁদের কালো টাকা আছে তাঁরাই নোট বাতিলের বিরোধিতা করছেন বলে এর আগে কটাক্ষ করেছেন তিনি। এ দিন রাহুল ও মমতার সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই ছ’টি টুইট করেন মোদী। লেখেন, ‘‘আগেও বলেছি, স্বল্পমেয়াদে একটু অসুবিধা হবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরিণামে নব্য মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের নতুন প্রজন্মের ক্ষমতায়ন হবে।’’

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর টুইটের তুলনায় এ দিন মমতা, রাহুলের আক্রমণের ডেসিবেল ছিল অনেক বেশি। দু’জনেরই বক্তব্য, মোদী প্রতিদিন অবস্থান বদলাচ্ছেন। গোড়ায় তিনি বলেন, কালো টাকা উদ্ধার করবেন। কিন্তু কেন্দ্রই বলছে, এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকার পুরনো নোট ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। তা হলে কালো টাকা কোথায়? মমতার কথায়, ‘‘কালো টাকা উদ্ধার বাহানা মাত্র। গোটা দেশে বিজেপি-র জমি কেনা, হীরে কেনা, নানাবিধ সম্পত্তি করা ও ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখা দেখে মনে হচ্ছে, নোট বাতিলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা।’’ রাহুলেরও কটাক্ষ, ‘‘মুষ্টিমেয় কয়েক জন শিল্পপতিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই মোদী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পেটিএম হয়ে উঠেছে পে টু মোদী।’’

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement