বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকরী। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের জন্য সহায়তা চাইতে শাসক দলের সঙ্গে যৌথ দরবারের প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকরী। তাঁর এমন মনোভাব জেনে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিরোধীরা অনাগ্রহী হলে শাসক দলের প্রতিনিধিরাই দিল্লি যেতে পারেন।
নদীর ভাঙন মোকাবিলায় কেন্দ্রের সহায়তা চাইতে শাসক ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের একসঙ্গে দিল্লি যাওয়ার প্রস্তাব বিধানসভার বিগত অধিবেশনে দিয়েছিলেন শোভনদেবই। শুভেন্দু তখন জানিয়েছিলেন, লিখিত প্রস্তাব পেলে তাঁরা ভেবে দেখবেন। তার পরে পরিষদীয় মন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার ফোনে কথা হয়েছিল এবং পাঁচ পাতার লিখিত বক্তব্য পাঠানো হয়েছিল বিজেপি পরিযদীয় দলের কাছে। কিন্তু বিধানসভার বাইরে বৃহস্পতিবার শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের দাবি নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও প্রতিনিধিদলে আমরা যোগ দেব না।’’ সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ তথা রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন অবস্থান নিয়েছে পরিষদীয় দল।
কেন তাঁরা একসঙ্গে রাজ্যের দাবি নিয়ে দরবার করতে যাবেন না, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা এ দিন বলেছেন, ‘‘পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সরকারের প্রস্তাব আমাদের পাঠাতে বলি। কিন্তু আমার সঙ্গে কথা ফোনে কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখি বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে বেরিয়ে গিয়েছে! আমরা সরকারের হাতে ব্যবহার হতে আসিনি! আমার আর পরিষদীয় মন্ত্রীর কথা কী ভাবে প্রকাশ্যে আসে? তা ছাড়া, এই সরকারের হাতে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে মগরাহাট পশ্চিমের বিজেপি প্রার্থী মানস সাহা-সহ ৫৩ জন কর্মী খুন হয়েছেন। এমন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাব না।’’ শুভেন্দুর দাবি, যে সরকার বিধানসভার মধ্যে নানা ভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করছে, বাইরে পুলিশ ও মামলা দিয়ে বিরোধীদের হেনস্থা করছে, তারাই আবার একসঙ্গে দিল্লি গিয়ে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তুলতে চাইছে। তাঁরা এই প্রক্রিয়ায় শামিল হতে চান না। পানিহাটির একটি অনুষ্ঠানে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শিষ্টাচারের প্রশ্নে বিরোধীদের যে সমালোচনা করেছেন, তারও জবাব দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব অবশ্য বলেছেন, ‘‘রাজ্যের উন্নয়নে সকলকে সঙ্গে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী যৌথ দরবারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেইমতো কথা এগিয়েছিল। বিরোধী দলনেতা প্রস্তাবের খসড়া চেয়েছিলেন। এবং দ্রুত দলের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছিলেন। কিন্তু সেই খসড়া পাঠানোর পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। তিনি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না!’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বিরোধীরা অনাগ্রহী হলে শেষ পর্যন্ত হয়তো শাসক দলের প্রতিনিধিরাই দিল্লি যাবেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’ শুভেন্দু আবার ব্যাখ্যা করেছেন, শোভনদেবের ফোন তিনি ওই কারণেই ধরছেন না।
ডিসেম্বর-প্রশ্নেও এ দিন ফের আর এক দফা ব্যাখ্যা হাজির করেছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডিসেম্বর ধামাকা, ডেডলাইন— এ সব কোনও কথাই শুভেন্দু অধিকারীর নয়। এগুলো আপনাদের (সংবাদমাধ্যম) বলা। আমি বলেছিলাম, ডিসেম্বরে অনেক কিছু ঘটতে শুরু করবে। তা-ই তো হচ্ছে! তিহাড়-যাত্রার উদ্বোধন হচ্ছে, এসএসসি-র অবৈধ নিয়োগ ধরা পড়ছে। যাদের চাকরি যাবে, তারা এ বার কালীঘাটের দিকে থালা হাতে যাবে!’’ ডিসেম্বরে ‘বড় চোর’ ধরা পড়ার দাবি প্রসঙ্গে অবশ্য আর কিছু বলেননি তিনি। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘এত দিন বলছিলাম, ‘রোলব্যাক অধিকারী’! এ বার বলতে হবে, ‘পেশকার অধিকারী’! কোর্টে কবে কী মামলা উঠবে, ওঁর কাছ থেকে জানতে হবে! আদালতের কোনও মামলা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, সেটা কখনও রাজনৈতিক ঘোষণার বিষয় হতে পারে? ভারসাম্য হারিয়ে রাজনীতিটাকে কমেডি বানিয়ে ফেলছেন!’’