সুর আরও চড়ালেন মমতা। ছবি: প্রদীপ আদক।
নোট সঙ্কট নিয়ে মোদী সরকারকে প্রবল বিরোধিতার মুখে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল গোটা দেশে। সোমবার বিরোধিতার সুর আরও চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করে দিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দিল্লির বুকে তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতেও আপত্তি নেই, জানালেন বৃন্দা কারাত। মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন মায়াবতী। আর জোট বেঁধে বিরোধিতার মঞ্চ প্রস্তুত করতে বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত বৈঠক ডাকল কংগ্রেস।
সংসদ ভবনে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বিভিন্ন বিরোধী দলের বৈঠক শুরু হয়। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ এই বৈঠকের আহ্বায়ক। আজাদ ছাড়াও কংগ্রেসের তরফে মল্লিকার্জুন খাড়গে, আনন্দ শর্মা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের তরফে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রবীণ সিপিআই নেতা ডি রাজা, জেডিইউ নেতা শরদ যাদব ছাড়াও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং আম আদমি র (আপ) প্রতিনিধিরাও সংসদে ভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ১৬ বা ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। তবে শুধু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেই বিরোধী দলগুলি ক্ষান্ত হবে না, দেশ জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পরিকল্পনাও চলছে। সেই আন্দোলনের রূপরেখাও এই বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
সংসদে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের ঘরে বৈঠকে বিভিন্ন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবারই উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে এক জনসভায় বলেছেন, ‘‘বড়লোকদের এখন ঘুমের ওষুধ খেতে হচ্ছে, আর গরিব মানুষ শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন।’’ মোদীর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর টুইট, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, দেশের গরিব মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন। এ কথা বলে তিনি গরিব মানুষকে অপমান করলেন এবং এটা নিম্ন রুচির পরিচয়। ...গরিব মানুষকে এ ভাবে মারবেন না।’’ আচমকা ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় ভারতের অর্থনীতি প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ছ’দিনে দেড় লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দেশ। উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘জামশোলে আটকে কমলালেবু, পেঁয়াজ, আনারস, বেদানা, টোম্যাটো, কাঁচালঙ্কা, বাঁধাকপি, ডাঁটা, নারকেল, ডাব। চিরকুন্ডায় আটকে আলু, পাম তেল, সরষের তেল, সাইকেল যন্ত্রাংশ, কম্বল, শীতের পোশাক। দাঁতনে আটকে ফুলকপি, ডিম, বাঁধাকপি, মাছ, মুসাম্বি, নারকেল, ডাব। শ্রীরামপুরে চা পাতা, রং, প্লাইউড। বক্সিরহাটে কয়লা। ডালখোলায় সব ধরনের ডাল। রাজ্য থেকে আলু, পটল, ঝিঙে, বরবটি, করলা যায়। তিন দিন ধরে সব গাড়ি আটকে, পচে যাচ্ছে।’’
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। আমরা প্রতিবাদ করছি। আমাদের দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, যত দিন না একশো টাকা সহ অন্যান্য বিকল্প নোট পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন পুরনো নোট ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হোক।’’ চলতি সপ্তাহেই সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে ঝড় তোলা হবে বলেও ইয়েচুরির ঘোষণা। সিপিএমের আর এক শীর্ষ নেতা তথা পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাতও নরেন্দ্র মোদীকে এ দিন তীব্র আক্রমণ করেছেন। গোয়ায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কান্নাকে বৃন্দা এ দিন ‘নাটকবাজি’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কীসের জন্য সময় চাইছেন? তিনি কি দেশের মানুষকে খিদে সহ্য করার জন্য সময় বেঁদে দিচ্ছেন? আমরা প্রধানমন্ত্রীর চোখের জল দেখব নাকি সেই বিধবার চোখের জল দেখব, যিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খেটেও বেতন পাচ্ছেন না? আমরা প্রধানমন্ত্রীর চোখের জল দেখব নাকি ২০ লক্ষ বাগিচা শ্রমিকের চোখের জল দেখব, যাঁদের বেতন আটকে গিয়েছে? এ সব কী নাটকবাজি প্রধানমন্ত্রীর!’’ সিপিএম এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলে ইয়েচুরির মতো বৃন্দাও জানিয়েছেন। দিল্লির বুকে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতেও যে তাঁর আপত্তি নেই, সে কথাও বৃন্দা জানিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোনও কর্মসূচি সিপিএম যে অংশ নেবে না, তাও বৃন্দা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
নোট সঙ্কটকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সর্বাগ্রে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু মমতার আহ্বানে মঞ্চ তৈরি হলে সিপিএমের পক্ষে যে সেখানে যোগ দেওয়া কঠিন, তা বোঝাই যাচ্ছিল। সিপিএমের সেই অস্বস্তি কাটাতে শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। ফলে বৈঠকে যোগ দিতে ইয়েচুরিদের আর কোনও সমস্যা হয়নি।