সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধী সাংসদের বিক্ষোভে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। পিটিআই
গান্ধী মূর্তিতে মালা দিয়ে ৫০ ঘণ্টার ধর্না শেষ করলেন বিরোধীরা। সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদেরও শাস্তির মেয়াদ শেষ হল। আগামী সোমবার লোকসভা এবং মঙ্গলবার রাজ্যসভায় আলোচনা হবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। সূত্রের খবর, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা শেষ হলেই রাজ্যসভায় অধিবেশনের অন্য কাজ বন্ধ রেখে কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব হবেন বিরোধীরা। এই নিয়ে একাধিক নোটিস বিভিন্ন দলের তরফে জমা পড়েছে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে।
এই সপ্তাহে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের মধ্যে বেশি সংখ্যকই ছিলেন তৃণমূলের। কংগ্রেস যখন মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ইডি-সিবিআই নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরব হয়েছে, তখন তৃণমূল অন্য বিরোধী দলগুলিকে একজোট করে ধর্না চালিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি, জিএসটি এবং সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে এই ধর্নায় শামিল হয়েছে টিআরএস, আপ, বাম, আরজেডি, আরএলডি, এসপি, এনসিপি, জেএমএম-এর মতো তেরোটি দল। কংগ্রেস এই ধর্না মঞ্চে এসেছে ঠিকই, কিন্তু তাতে পূর্ণ যোগদান করেনি। আজ গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে মালা দেন টিআরএস, তৃণমূল, আপ-এর সাংসদেরা। কিন্তু ছিলেন না লোকসভায় সাসপেন্ড হওয়া কংগ্রেসের চার সাংসদ। আবার বিরোধীরা একজোট হয়ে বিজয় চকে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানেও অনুপস্থিত ছিল কংগ্রেস। এসপি-র রামগোপাল যাদব এবং ডিএমকে-র তিরুচি শিবা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজয় চকে। তাঁদের বক্তব্য, “এটা মানুষের জয়। মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনার দাবি প্রায় রোজ জানানো হলেও সরকার বাজেট অধিবেশনের ২৭ দিন এবং চলতি বাদল অধিবেশনের গোড়া থেকেই এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ছিল। অনেক লড়াইয়ের পর তাদের রাজি করানো গিয়েছে।”
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য গোটা উদ্যোগকে ‘সমমনস্ক দলগুলির মধ্যে ঐক্যের ছবি’ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, যেহেতু আগামী সপ্তাহে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন, তাই তার আগে ভারসাম্য বজায় রাখতে তাঁর দলও বিরোধী ঐক্যের প্রতি দায়বদ্ধতার দিকটিকে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে। রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “এই ধর্নাই প্রমাণ করে দিল, সমমনস্ক দলগুলি একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এই দলগুলির মধ্যে অবস্থানের তারতম্য থাকতে পারে, কিন্তু বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ।”
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূলের তরফে লোকসভায় কে বলবেন তা স্থির না হলেও, রাজ্যসভায় বলবেন ডেরেক। সূত্রের খবর, বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে সংসদ চালু করার সমাধানসূত্র নিয়ে ঘরোয়া ভাবে আলোচনা হয়। সেখানে ছিলেন না কংগ্রেসের কোনও সাংসদ। তাঁরা তখন বাইরে আন্দোলন করছিলেন, সনিয়া গান্ধীর ইডি-তে হাজিরা দেওয়া নিয়ে। ওই আলোচনায় গয়াল বিরোধী নেতাদের জানান, সরকার সোম, মঙ্গলবার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি, ফলে তারপর থেকে সংসদে আর বিশেষ কোনও আলোচনার বিষয় থাকছে না। তখন বাকি যা যা কাজ রয়েছে, (বিল পাশ করানো) তা চলবে। সূত্রের খবর, জবাবে বিরোধীদের কেউ কেউ জানান, এর পর অগ্নিপথ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি-সহ বিভিন্ন দলের নোটিস জমা পড়েছে। কিন্তু সরকারপক্ষ আলোচনায় নারাজ। ডেরেকের কথায়, “অগ্নিপথ নিয়ে বিভিন্ন বিরোধী দলের মতামত এবং দাবির মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকছে। আমরা চাইছি, চার বছরের পর কেন্দ্র যেন রাজ্যের ঘাড়ে এঁদের চাকরির দায়িত্ব চাপিয়ে না দেয়। কেন্দ্রই যেন নিয়োগ করে।”
গত রাতের ধর্না নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, যে সহযোগিতা সংসদের পরিষেবা কর্মীরা করছিলেন, তা হঠাৎই কিছুটা গুটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বাইরে যাতায়াতের জন্য ফেরি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। রাত ৮টার পর তাঁদের ধর্নাস্থল পরিষ্কার করার পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিরোধীদের বক্তব্য, সরকারের নির্দেশেই এই অসহযোগ।