প্রতীকী ছবি।
বিহারে ক্ষমতায় থাকা এনডিএ জোটের প্রধান শরিক বিজেপি রাজি না হলেও জাতিগত জনগণনার পক্ষে সরব অন্য শরিক জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার। আজ নীতীশের সুরেই দিল্লিতে জাতিগত জনগণনার পক্ষে সরব হল তৃণমূল, আরজেডি, আরএলডি বা আপের মতো বিরোধী দলগুলি।
আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরি চরণ সিংহের ৩৫-তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে একটি সামাজিক ন্যায় সম্মেলনের আয়োজন করেন রাষ্ট্রীয় লোক দলের নেতা তথা চরণ সিংহের নাতি জয়ন্ত চৌধরি। বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল জাতিগত জনগণনা। উপস্থিত দলগুলির অধিকাংশ প্রতিনিধিই জাতিগত জনগণনার প্রশ্নে অবিলম্বে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে বলে দাবি তোলেন।
জয়ন্ত বলেন, শেষ বার জাতির ভিত্তিতে জনগণনা ১৯৩১ সালে হয়েছিল। যার ভিত্তিতে আজও সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি হয়ে থাকে। যা আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। তাই তফসিলি জাতি, আদিবাসী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি বর্তমানে কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা জানতে এবং তাদের উন্নতির জন্য দ্রুত জাতিভিত্তিক জনগণনা হওয়া প্রয়োজন।
বিরোধী শিবিরের দাবি, আজকের দিনে বিভিন্ন জাতিগুলির আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি বুঝতে জাতিভিত্তিক জনগণনার প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যে জাতিগুলি সংরক্ষণের আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছে, জনগণনার মাধ্যমে তাদেরও সংরক্ষণের আওতায় এনে সমতা রক্ষা করা সম্ভব হবে। আজকের বৈঠকে জাতিগত জনগণনার পক্ষে সরব হন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর কথায়, ‘‘ব্রিটিশ জমানায় নিয়ম করে জাতিভিত্তিক জনগণনা হত। কিন্তু স্বাধীনতার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ২০১৮ সালে সংসদে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, জাতিভিত্তিক জনগণনা করবে সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্যে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ উল্টে এ বছরের বাজেট অধিবেশনের সময়ে সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, জাতিভিত্তিক জনগণনা করার কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের।
সুখেন্দশেখরের মতে, সরকারের উচিত জাতিগত জনগণনা করে সেই রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করা। সুখেন্দুশেখরের অভিযোগ, তা না করে সরকার মনুবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে বেশি উৎসাহী। সেই কারণে জাতিভিত্তিক জনগণনা নয়, সরকাররের লক্ষ্য হল অযোধ্যা, কাশী বা মথুরা নিয়ে সরব হওয়া। অন্য দিকে বিজেপির আশঙ্কা, জাতিভিত্তিক জনগণনা হলে ওবিসি সম্প্রদায়ের সমর্থন পিছন থেকে সরে যেতে পারে। তাই এ নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতির পক্ষপাতী দল।
জাতীয় জনগণনার পক্ষে সরব হয়েছেন জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী। তাঁর বক্তব্য, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশের গরিব মানুষের জানার অধিকার রয়েছে, স্বাধীনতার এত বছর পরে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক স্বচ্ছলতার নিরিখে তাঁরা ঠিক কী অবস্থায় রয়েছেন। ত্যাগীর মতে, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান স্পষ্ট না হলে সরকারের জনমুখী পরিকল্পনাগুলি সঠিক ভাবে রূপায়িত করা সম্ভব হবে না।
বর্তামানে গোটা দেশের মানুষের মধ্যে যে আর্থিক বৈষম্য রয়েছে, তা বোঝার জন্যও জাতিভিত্তিক জনগণনার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মত বিরোধীদের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফ্যামের ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছে প্রায় ৭৪.৩ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি বা দেশের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যার সমষ্টিগত সম্পদের পরিমাণ ২২.৯ শতাংশ। সেখানে বাকি ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার কাছে রয়েছে মাত্র ২.৮ শতাংশ সম্পদ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।