অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত মার্চ মাসে গোটা দেশে চালু হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। তবে এই আইন নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল জাতীয় রাজনীতি। সিএএ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়েছিল। কোথাও কোথাও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়। নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। অসমে এই আন্দোলনের ঝাঁজ তীব্র ছিল। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন চালু করে। কিন্তু চার মাস সিএএ চালু হয়ে গেলেও অসমে নাগরিকত্বের জন্য মাত্র আট জন আবেদন করেছেন। তাঁর মধ্যে মাত্র দু’জন ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলেন। এমনই জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হিমন্ত বলেন, ‘‘আমি অনেক লোকের সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা তাঁদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত। তবে প্রয়োজনে আদালতে তা প্রমাণ করবেন। এটা অসমের মানুষের কাছে সাধারণ অনুভূতি।’’
অসমের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যাঁরা ২০১৫ সালের আগে ভারতে এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদনে অগ্রাধিকার পাবেন। তাঁরা যদি আবেদন না করেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করব। আর যাঁরা ২০১৫ সালের পরে এসেছেন, তাঁদের আমরা নির্বাসিত করব।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘৫০ লক্ষ মানুষ এই আইনের অধীনে নাগরিকত্ব পাবেন।’’ সেখানে আইন চালুর চার মাস পরে মাত্র আট জনের আবেদন করা খুবই অসন্তোষজনক বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ বিল পাশ করিয়েছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। এমনকি, সেই বিলে সইও করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। কিন্তু সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
সিএএ বিল আইনে পরিণত হওয়ার পরেও মোদী সরকার তা কার্যকর করতে পারেনি। এই আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়ান বিরোধীরা। দাবি, সিএএ ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘বৈষম্যমূলক’। তাঁদের কথায়, কেন এই আইনে শুধু মাত্র ছয় সম্প্রদায়ের কথা বলা হল? কেন মুসলিম সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে এই আইন বানাল কেন্দ্র সরকার? এই আন্দোলনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল অসমে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই কথাও সোমবার মনে করিয়ে দেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।