parliament

বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে কাজ মাত্র ৬%

সরকারের ওই মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ শেষ দিনে স্পিকারের ডাকা ধন্যবাদজ্ঞাপক চা-চক্র বয়কট করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতো দলগুলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৩০
Share:

বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৩ মার্চ। ফাইল চিত্র।

এ বারের বাজেট অধিবেশনে নষ্ট হয়েছে ১০৩ ঘণ্টার কাছাকাছি। এর জন্য দায়ী কে?

Advertisement

সেই প্রশ্ন তুলে যুযুধান বিজেপি ও কংগ্রেস— উভয় পক্ষই। বিজেপি বলছে, সংসদ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবিশ্বাসী কংগ্রেস শুধু রাহুল গান্ধীর জন্য সংসদ চলতে দেয়নি। কংগ্রেসের লক্ষ্যই ছিল সংসদ চলতে না দেওয়া। অন্য দিকে কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, যদি আদানি কাণ্ডে সরকারকে আরও অস্বস্তিজনক প্রশ্নের মুখে পড়ে বিব্রত হতে হয়, সে জন্যই সংসদ চালাতে ইচ্ছুক ছিল না সরকার। সরকারের ওই মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ শেষ দিনে স্পিকারের ডাকা ধন্যবাদজ্ঞাপক চা-চক্র বয়কট করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতো দলগুলি।

বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৩ মার্চ। কার্যত প্রথম দিন থেকেই রাহুল গান্ধীর লন্ডনে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদের উভয় কক্ষ। প্রথম দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় ফি দিনের অধিবেশন। সব মিলিয়ে মাত্র ছ’শতাংশ কাজ হয়েছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে। জল্পনা ছিল, কাজ যখন হচ্ছে না তখন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে অধিবেশন। কিন্তু কাজ না হলেও, শেষ দিন পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় শাসক শিবির। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, আসলে রাহুল গান্ধী ও তাঁর দল যে গণতন্ত্র-বিরোধী, সংসদকে মানার প্রয়োজনবোধ করেন না, তা দেশের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই রোজ সংসদ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিবারের প্রতি আনুগত্য, বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর প্রশ্নে কংগ্রেস যে গোটা অধিবেশন ভেস্তে দিতে প্রস্তুত, এই দাবি তোলে বিজেপি। শাসক দলের আরও দাবি, এটাই কংগ্রেসের ‘গণতন্ত্র-বিরোধী’ প্রকৃত চেহারা, এবং সেই ‘চেহারা’ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কংগ্রেস যে সংসদের অবমাননা করতেও পিছপা নয় তা-ও আগামী দিনে প্রচারে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর কথায়, ‘‘অধিবেশনের শেষ দিনেও কালো কাপড় পরে এসে সংসদের অবমাননা করেন কংগ্রেস সাংসদেরা।’’ সংসদের পাশাপাশি রাহুল গান্ধী আদালতের নির্দেশেরও অবমাননা করেছেন এই দাবি বিজেপির। রিজিজু বলেন, ‘‘রাহুল ও তাঁর সঙ্গীরা আদালতের উপরে চাপ সৃষ্টি করার জন্য সুরাতের আদালতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেস পথে নামে। যা নিন্দনীয়।’’

Advertisement

অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানি সংস্থার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে শাসক শিবির বলেই দাবি কংগ্রেসের। তাদের মতে, ওই ঘটনায় ‘কালিমালিপ্ত’ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি। সংসদ চললে আদানি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের আরও নানা দিক খুলে যেত বলে আশঙ্কায় থাকা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বই এ যাত্রায় অধিবেশন ভেস্তে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন বলে সরব হয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার দল নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিরোধীরা যাতে মুখ খুলতে না পারেন।’’ তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের মুখ পড়তে হতে পারে, এই আশঙ্কায় বিরোধীদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। খড়্গের দাবি, তাঁর ৫২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এ ভাবে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। এই প্রবণতা বজায় থাকলে গণতন্ত্রের মৃত্যু আসন্ন বলে দাবি করেন খড়্গে। একই সঙ্গে দেশের ১৮-১৯টি দল আদানি কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি দিয়ে তদন্তের দাবি করলেও, সরকার যে ভাবে সেই দাবি শুনতে রাজি নয়, তা যথেষ্ট সন্দেহজনক বলেই মনে করেন খড়্গে। তাঁর কথায়, ‘‘ডাল মে কুছ কালা...।’’

সংসদ না চলার প্রশ্নে সরকারের নেতিবাচক মনোভাব দায়ী বলেই মনে করে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ একাধিক বিরোধী দল। তাই স্পিকার ওম বিড়লার অধিবেশন শেষে দেওয়া ধন্যবাদজ্ঞাপক চা চক্র বয়কট করে ওই দলগুলি। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি দ্বিতীয় পর্বের অধিবেশনের গোড়া থেকে রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে সরব। অন্য দিকে, কংগ্রেসের দাবি ছিল আদানি কাণ্ডে জেপিসি তদন্ত। সব মিলিয়ে দু’পক্ষের অনড় অবস্থানে বাজেট অধিবেশন জলে যায়। সেই জলে যাওয়া অধিবেশনের জন্য স্পিকারকে আবার ধন্যবাদ দেওয়ার কী আছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement