প্রতীকী ছবি।
সম্ভাবনা সমুদ্র-সমান। কিন্তু স্নান তো দূর, সেখানে পা-ভেজানোর রাস্তাও এখন অনেকের সামনে বন্ধ! করোনা-কালে স্কুলে অনলাইন পড়াশোনার এই ছবিই ফুটে উঠল দুই সমীক্ষায়।
কোভিডের থাবার পরে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা কী ভাবে বেড়েছে, উপদেষ্টা সংস্থা ইতিহাস-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে বৃহস্পতিবার সেই বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বণিকসভা সিআইআই। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২-৩ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভারতে অনলাইন শিক্ষার বহর বেড়েছে ১৪০০%! সারা বিশ্বে ৬৫০%। লকডাউনের প্রায় গোড়া থেকেই শিক্ষা মন্ত্রক বলেছে, এমনিতেই শিক্ষায় ইন্টারনেট, কম্পিউটার-নির্ভরতা বাড়ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা আরও বেশি করে হাত ধরবে ডিজিটাল প্রযুক্তির। শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক একাধিক বার বলেছেন, এই অতিমারির প্রকোপ সম্ভবত পাকাপাকি ভাবে বদলে দেবে স্কুলের শিক্ষার ধরনকে। কিন্তু সকলে তার সুবিধা আদৌ কতটা সমান ভাবে নিতে পারবে, সেই বিতর্ককে আরও উস্কে দিল শিক্ষা মন্ত্রকেরই নেতৃত্বাধীন এনসিইআরটি-র সমীক্ষা।
সিবিএসই স্কুল, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় এবং জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষক, অভিভাবকদের নিয়ে করা ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোন হাতে পাচ্ছে না ২৭% পড়ুয়া। ইন্টারনেট সংযোগ, এমনকি বিদ্যুতের ঘাটতিতেও সমস্যার মুখে ২৮%। প্রশ্ন উঠছে, এই সমস্ত স্কুলের বড় অংশই শহরে। ছাত্র-ছাত্রীরা মূলত সচ্ছল পরিবারের। সেখানেই যদি এই হাল হয়, তা হলে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলিতে সমস্যা কতটা তীব্র! প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়ারাই বা কতটা বিপাকে?
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ৭০ হাজার
কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন পাঠ যে ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না-করে জোর করে তা চাপিয়ে দেওয়া অসঙ্গত। অনেকের অভিযোগ, নোটবন্দির সময়ে যেমন মোদী সরকার ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধিকে পাখির চোখ করেছিল, এ বার ‘ঘরবন্দির সময়ে’ যেন তেমনই নিশানা করেছে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারকে।
আরও পড়ুন: ট্রায়াল শেষের আগেই ছাড় কি দেশেও!
শিক্ষাবিদদের একাংশের বক্তব্য, কারও বাড়িতে একটিই স্মার্টফোন, কারও বা তা কেনারও সামর্থ্য নেই। ফলে পড়ায় পিছিয়ে যাওয়ার ভয়ে আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। কত জনেরই বা পকেটের জোর আছে ভিডিয়ো-ক্লাস শোনার মতো ডেটা-প্যাক কেনার? পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি এবং সকলকে নতুন ব্যবস্থার চৌহদ্দিতে টেনে আনার বন্দোবস্ত না-করে অনলাইন পড়াশোনার এমন দৌড় ডিজিটাল বিভাজনকেই গভীর করছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। প্রযুক্তির সুবিধা শেষতম প্রান্তের পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনোর বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলেছে বণিকসভাটির সমীক্ষাও।
আরও পড়ুন: এ বার করোনা আক্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র
এনসিইআরটির সমীক্ষা অনুযায়ী, এ ছাড়াও সমস্যা অনেক। যেমন, শিক্ষককে সামনাসামনি প্রশ্ন করতে না-পারা, কম্পিউটার ব্যবহারে অনেক অভিভাবকের অসুবিধা, অঙ্কের মতো বিষয় ফোন বা কম্পিউটারের পর্দায় দেখে বোঝার ক্ষেত্রে ছোটদের আড়ষ্টতা, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক শিক্ষকের তেমন সড়গড় না-হওয়া, স্কুলের পাঠানো পাতার পর পাতা পড়া মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে দেখার অসুবিধা ইত্যাদি।
কেন্দ্রের দাবি, এক দিকে পরিকাঠামো দ্রুত বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে অনলাইন শিক্ষার উপযুক্ত বিকল্প (যেমন, টিভি চ্যানেল)। জোর
দেওয়া হচ্ছে প্রত্যন্ত প্রান্তের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের পড়ুয়ার দরজায় পৌঁছনোর বিষয়েও। নিজেদের সমীক্ষার ফল দেখার পরে সেই জোর কতটা বাড়বে, তত দিন সবুর সইবে কি না, প্রশ্ন সেখানেই।