কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে তোলপাড়। —ফাইল চিত্র
উস্কানিমূলক মন্তব্য। তার প্রেক্ষিতে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন। জবাবে ফের বিতর্কিত মন্তব্য। ধারাবাহিক ভাবে এমনই টুইট যুদ্ধে জড়ালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ে এবং কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি দীনেশ গুন্ডু রাও। মন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, “হিন্দু মেয়েদের গায়ে হাত দিলে হাত কেটে নেওয়া হবে।” এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয় টুইট যুদ্ধ। গুন্ডু রাও রাজনৈতিক ভাবে প্রশ্ন তুললেও হেগড়ের পর পর বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক মন্তব্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ নিয়ে সরগরম কর্নাটকের রাজনীতি।
রবিবার কর্নাটকের কোদাউগু জেলার সোমরপেট এলাকার মাদাপুরা গ্রামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হিন্দু জাগরণ বেদিকে নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সেখানে যোগ দেন উত্তর কর্নাটকের পাঁচ বারের বিজেপি সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ে। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘কেউ হিন্দু মহিলাদের গায়ে হাত দিলে তাঁর হাত কেটে নেওয়া হবে।’’ এর পাশাপাশি তাজমহলেরও বিতর্কিত ব্যাখ্যা দিয়ে হেগড়ে বলেন, ‘‘তাজমহল আগে হিন্দু শিবমন্দির ছিল। রাজা পরমতীর্থ সেই মন্দির নির্মাণ করে নাম দিয়েছিলেন ‘তেজো মহালয়’। সেটাই পরে তাজমহল হয়ে যায়।’’ এর পর মন্ত্রীর উস্কানি, ‘‘এ ভাবে যদি আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তাহলে একদিন আমাদের বাড়িঘরের নামও বদলে হয়ে যাবে মসজিদ। রামকে জাহাপনা বলে ডাকা হবে। সীতা হয়ে যেতে পারেন বিবি।’’
এই নিয়েই প্রশ্ন তোলেন দীনেশ গুন্ডু রাও। টুইটারে তিনি শুধু বলেন, ‘কর্নাটক থেকে মন্ত্রী হয়ে রাজ্যের উন্নয়নে কী করেছেন হেগড়ে।’ তার পরই শুরু হয় দু’জনের মধ্যে টুইট তরজা।
ব্যক্তিগত জীবনে গুন্ডু রাও বিয়ে করেছেন তাবু রাওকে। যিনি ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের। গুন্ডু রাওয়ের প্রশ্নের রাজনৈতিক উত্তর না দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এই দিক নিয়ে মন্তব্য করেনকেন্দ্রীয় মন্ত্রী হেগড়ে। টুইট করেন, আমি জানি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির একমাত্র অবদান, ‘তিনি একজন মুসলিম মহিলার পিছনে ছুটে বেড়ান।’
আরও পডু়ন: হেগড়ে ভারতবাসীর লজ্জা! ‘মুসলিম মহিলা’ বিতর্কে তোপ রাহুলের, মুখ খুললেন তাবুও
আরও পড়ুন: সন্তান না হওয়ায় একঘরে করেছিল সমাজ, ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে পদ্মশ্রী পেলেন থিম্মাক্কা
এর জেরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়। হেগড়ের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে গুন্ডু রাওটুইটারে লেখেন, ‘এটা ওঁর (হেগড়ে) সাংস্কৃতিক বোধবুদ্ধির অভাব। উনি হিন্দু সংস্কৃতি থেকে কিছুই শিক্ষা নেননি।’গুন্ডু রাও আরও লেখেন, ‘সময় ফুরিয়ে যায়নি। উনি এখনও সম্মাননীয় ব্যক্তি হতে পারেন।’
শুধু গুন্ডু রাও নন, বহু টুইটার ব্যবহারকারী হেগড়ের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন। কেউ লিখেছেন, ‘পাগলাগারদে গিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত’ হেগড়ের। অন্য একজনের মন্তব্য, ‘‘মন্ত্রী হয়ে আপনি কী করেছেন কর্নাটকের জন্য। অন্তত ভদ্রতাটা শিখুন। সেটাই হবে আপনার সবচেয়ে বড় পাওনা।’ সব মিলিয়ে ৫৫২ জন রিটুইট করেছেন। তার মধ্যে প্রায় সবাই তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দেন। মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন হাতে গোনা দু’-একজন। এছাড়া উত্তর দিয়েছেন ৩৩৭ জন। প্রতিক্রিয়া প্রায় দেড় হাজার।
এর আগেও গুন্ডু রাওয়ের মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করা নিয়ে বিজেপির অন্য নেতারা আক্রমণ করেছেন। এ নিয়ে তাবু রাও এর আগেও বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তাই তাঁকে টেনে মন্তব্য করা অশোভন। এবার হেগড়ের মন্তব্যের পর তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ যে রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে ফের সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে রাজনীতির কারবারিরা যেন তাঁর সঙ্গে গুন্ডু রাওয়ের বিয়েকে টেনে না আনেন।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)