পুলিশের সঙ্গে ধৃত বিনয়। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে মিলেছিল শুধু প্রত্যাখ্যান। তা মেনে নিতে পারেননি অভিযুক্ত। তাই ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন মেয়েটিকে। সে জন্য কীটনাশক মেশানো জল নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি দুই বোনও যে ওই জল মুখে দেবে, তা বুঝতে পারেননি তিনি। সেই জল মুখে দিতেই ২ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে যুঝছে অন্য জন। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বাবুরা গ্রামে ২ দলিত কিশোরীর রহস্য মৃত্যুর তদন্তে নেমে এমনই তথ্য সামনে আনল পুলিশ। বিনয় নামের ২৮ বছরের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে তারা। খুনে তাঁকে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক নাবালক কিশোরকেও। তবে পুলিশের দাবিতেও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ওই ৩ কিশোরীর পরিবারের লোকজন।
শুক্রবার নিহত দুই কিশোরীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ওই দিনই অভিযুক্তদের নাগাল পায় পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লকডাউনে ১৭, ১৬ এবং ১৩ বছর বয়সি ওই ৩ কিশোরীর সঙ্গে আলাপ হয় পাশের গ্রামের ছেলে বিনয়ের। যে সরষে খেত থেকে মেয়েগুলিকে উদ্ধার করা হয়, তার পাশেই বিনয়দের একটি জমি ছিল। লকডাউন চলাকালীন সেখানে ওই ৩ কিশোরীর সঙ্গে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বিনয়ের। প্রায়ই ওই জমিতে দেখা সাক্ষাৎ হত সকলের। সেখানেই এক দিন ১৭ বছর বয়সি ওই কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন বিনয়। কিন্তু ওই কিশোরী তাতে রাজি হয়নি। বিনয়কে ফোন নম্বর দিতেও অস্বীকার করে সে। বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়েই প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বিনয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন দোকান থেকে চিপস এবং কিছু খাবার কিনে জমিতে গিয়েছিল ওই ৩ কিশোরী। সেখানে তাদের জন্য কীটনাশক মেশানো জল বোতলে ভরে হাজির হন বিনয়। তাঁর সঙ্গে ছিল পাড়ার এক কিশোরও। সাদা মনেই বিনয়ের থেকে জল নিয়ে খায় ১৭ বছরের ওই কিশোরী। কিন্তু তার দুই বোনও যে ওই জল মুখে দেবে, তা বুঝতে পারেননি বিনয়। তাই মুখে গ্যাঁজলা উঠে ৩ কিশোরী যখন মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে, ঘটনাস্থল থেকে সঙ্গী কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে চম্পট দেয় সে।
ঘটনাস্থল থেকে ওই জলের বোতল আগেই উদ্ধার করে পুলিশ। সিগারেটের পোড়া অংশও উদ্ধার হয় সেখান থেকে। তদন্তে নেমে ঘটনার সময় ওই এলাকায় কতগুলি মোবাইল ছিল খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। তাতেই বিনয়ের মোবাইলের হদিশ মেলে। সেই মতো খোঁজ শুরু করতেই বিনয়ের নাগাল পাওয়া যায়। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে তিনি অপরাধ কবুল করেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর কাছ থেকেও নাবালক ওই কিশোরের কথা পুলিশ জানতে পারে।
বিনয়ের গ্রেফতারিকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে ওই ৩ কিশোরীর পরিবারের লোকজন। বিনয়ের ফাঁসির দাবি তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, তাঁদের মেয়েদের যতটা কষ্ট পেতে হয়েছে, বিনয় এবং তাঁর সঙ্গীকেও যেন সমান কষ্ট ভোগ করতে হয়। কিন্তু এখনও যেন কোথাও খটকা লাগছে তাঁদের। মেয়ের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতদের মধ্যে এক কিশোরীর মায়ের। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, দেহ উদ্ধার হওয়ার সময় মেয়ের হাত ও পা বাঁধা ছিল। নিজে হাতে সেই বাঁধন খোলেন তিনি। বিনয় যে কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ, ১৭ বছরের সেই মেয়েটি এই মুহূর্তে কানপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছে। তার এক দাদা বলেন ‘‘কোনও কালে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলেনি বোন। ওর কাছে ফোনও ছিল না। ফোন নম্বর দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে?’’ এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িয়ে আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে উন্নাও পুলিশ।