রাজস্থানে ৫৫০০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
কর্নাটকে যখন ভোটদান চলছে, সেই সময় রাজস্থানের মাটিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং তার পর জোড়া বক্তৃতায় কংগ্রেসকে নাগাড়ে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তুললেন কর্নাটকের জনজাতি হাক্কি পিক্কিদের সুদানে আটকে থাকার প্রসঙ্গ। অভিযোগ করলেন, কংগ্রেস আসলে চাইছিল উদ্ধারকার্যের সময় এই জনগোষ্ঠীর কারও সঙ্গে অশুভ কোনও ঘটনা ঘটুক, তা হলে ভোটের আসরে লাভ তোলা যাবে!
কর্নাটক ভোটের দিনে রাজস্থানে ৫৫০০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রহ্মকুমারী কেন্দ্র ও শ্রীনাথজি মন্দিরে দর্শন ছাড়াও বক্তব্য রাখলেন দু’টি জনসভায়। মন্দির দর্শন রাজস্থানে হলেও কর্নাটকবাসীকে ভোটের সকালে প্রচ্ছন্ন হিন্দুত্বের বার্তা দেওয়ার কৌশলই মোদী নিয়েছেন বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি মরুরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয়তায় স্পষ্ট, কর্নাটকের ভোটের দিনেই রাজস্থানের ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ মোদী বলেছেন, “অরণ্যের জড়ি বুটি নিয়ে হাক্কি পিক্কিরা সুদানে গিয়ে বিক্রি করেন। কয়েক সপ্তাহ আগে সুদানের হিংসার কারণে তাঁরা ফেঁসে গিয়েছিলেন। সে সময় কংগ্রেস ভোটের রাজনীতির জন্য এখানে বসে চিৎকার করে তাঁদের আরও অসুবিধায় ফেলেছিল। আসলে কংগ্রেস চাইছিল উদ্ধারের সময় এক আধটা অশুভ ঘটনা ঘটে যাক, তা হলে ভোটের খেলা জমে যাবে। মোদীর ঘাড় চেপে ধরতে পারবে! কিন্তু মোদীকে সম্ভবত এখনও তারা চিনতে পারেনি! সঙ্কটে আটকে পড়া এক এক জন ভারতীয়কে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মোদী যে কোনও বাধা অতিক্রম করতে পারে।” তাঁর কটাক্ষ, “মোদীর ক্ষতি করার জন্য কংগ্রেস দেশের ক্ষতি করতেও পিছপা নয়।”
পাশাপাশি মোদী আজ উস্কে দিতে চাইলেন রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এবং সচিন পাইলটের বিবাদও। কর্নাটক থেকে রাজস্থানের প্রসঙ্গে এসে মোদীর বক্তব্য, “এই রাজ্যে তো কুর্সি দখলের খেলা চলছে। এ কেমন সরকার যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বিধায়কের উপর ভরসা নেই? বিধায়কের মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা নেই? একে অন্যকে অপমান করছে। গত পাঁচ বছরে কুর্সিই যখন সঙ্কটে, তখন বিকাশ নিয়ে কার মাথাব্যথা?” তাঁর দাবি, গত ন’বছরে নতুন রেল লাইন, বিদ্যুতের সংযোগ, মেডিকেল কলেজের মতো বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ হয়েছে। তাঁর অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত। পরে তিনি টুইট করে বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আগের সরকারগুলির সমালোচনা করা ঠিক হয়নি। মোদীজী বোধহয় ভুলে গিয়েছেন, তিনি হাতে যে পাকাপোক্ত দেশটি পেয়েছিলেন, তা স্বাধীনতার ৬৭ বছর পর পেয়েছিলেন। এই দেশ একদিনে তৈরি হয়নি।”
মোদী অবশ্য আজ ইন্দিরা গান্ধী ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগানকে ‘সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’ বলে উল্লেখ করে বলেন, কংগ্রেসের ওই ঘোষণায় গরিবরা আরও গরিব এবং বড়লোকেরা আরও বড়লোক হয়েছেন। কংগ্রেস সামাজিক ন্যায়ের নামে মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন মোদী। শুধু কংগ্রেস নয়, সমাজবাদী অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলিকেও এক হাত নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “সাতচল্লিশ সালের পরে অনেক দল সামাজিক ন্যায়ের নামে জাতিবাদ, পরিবারবাদের ভ্রষ্ট নীতি উপহার দিয়েছে। তারা ভোটব্যাঙ্কের জন্য সমাজবাদের কথা বলেছে। তাতে ওই ভোটব্যাঙ্কেরও আখেরে ক্ষতিই হয়।’’